প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সড়কে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন খামারিরা। দুধের ন্যায্যমূল্য ও দুধ বিক্রির জায়গা পরিবর্তনের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার দেলুয়াবাড়ী বাজার এলাকায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন খামারিরা।
স্থানীয় খামারি ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কয়েক শ খামারে ১৬ হাজার ৭৭৫ গাভি আছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ১৩০ মণ (১ লাখ ২৫ হাজার লিটার) দুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় দুধের হাট বসে উপজেলার দেলুয়াবাড়ী বাজারে। বাজারটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার লিটার দুধ আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু বাজারটিতে স্থানীয় গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর (সিন্ডিকেট) কারণে খামারিরা দুধের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারটিতে প্রতি লিটার দুধ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। এর ফলে খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেকে খামার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এ ছাড়া দেলুয়াবাড়ী বাজারের দুধ বিক্রির হাটের জায়গাটি সংকীর্ণ হওয়ায় বাইরের ঘোষ কিংবা ব্যবসায়ীরা বড় গাড়ি নিয়ে দুধ কিনতে আসতে পারেন না। এ সুযোগে দেলুয়াবাড়ী বাজারের গুটিকয়েক ঘোষ ও ব্যাপারী সিন্ডিকেট করে খামারিদের কাছ থেকে কম দামে দুধ কিনছেন।
উপজেলার জোতবাজার গ্রামের গরুর খামারি আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে তাঁর খামারে ৯টি গাভি থেকে প্রতিদিন ১১০–১২০ লিটার দুধ উৎপাদন করা হয়। তিনি দেলুয়াবাড়ী বাজারে দুধ বিক্রি করেন। গত ৫ –৬ মাসে এ বাজারে প্রতি লিটার দুধ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুধেল একটা গাভি লালন-পালন করতে মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। বর্তমান দুধের যে দাম, তাতে তাঁর লোকসান হচ্ছে।
খামারিদের সংগঠন মান্দা ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ফজলে নূর বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে হাটের বর্তমান জায়গা নিয়ে। সংকীর্ণ জায়গায় দুধের হাট বসায় বাইরের ব্যাপারীরা এ বাজারে আসতে চান না। এ সুযোগে স্থানীয় গুটিকয়েক ব্যাপারী নিজেরা যোগসাজশ করে খামারিদের কাছ থেকে কম দামে দুধ কেনেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান দুধের হাটের জায়গা পরিবর্তন করে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে দেলুয়াবাড়ী খরহাটির জায়গায় স্থানান্তর করার দাবি জানিয়ে আসছি। মহাসড়কের পাশে দুধের হাট বসলে বাইরের ব্যাপারীরা এখানে আসতে পারবেন। এতে করে আমরা দুধের ন্যায্যমূল্য পাব বলে আশা করি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, দেলুয়াবাড়ীতে দুধের বর্তমান বাজারের জায়গা খুবই সংকীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।
জায়গাসংকটের কারণে বাইরের ক্রেতারা বড় গাড়ি নিয়ে এ বাজারে দুধ কিনতে আসতে পারেন না। এর ফলে দুধের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা। হাটের জায়গা পরিবর্তন করে মহাসড়কসংলগ্ন জায়গায় স্থানান্তর করার কাজ চলছে।
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘খামারিরা আমার কাছেও এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। আমি হাটে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছি। খুব দ্রুত এ সমস্যার উত্তরণ ঘটবে।’