রাজশাহী বরেন্দ্র জাদুঘরের প্রত্ননিদর্শন এভাবেই মেঝেতে ফেলে রেখে সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: চারদিকে হাতুড়িপেটার আওয়াজ। চলছে দেয়ালে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। বারান্দাজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে নীল পলিথিনে মোড়ানো কিছু জিনিস। কাছে গেলে বোঝা যায়, সেগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। গত শনিবার রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, এই জাদুঘরে ১৭ হাজার প্রত্ননিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১ হাজার ১০০টি নিদর্শন গ্যালারিতে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকিগুলোর প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেই। রাখারও জায়গা নেই। জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত।

বরেন্দ্র জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘরের ভেতরের বারান্দায় ৪৭টি প্রত্নবস্তু গ্যালারিতে প্রদর্শিত হচ্ছিল। বারান্দার দেয়ালে নোনা ধরার কারণে টাইলস লাগানো হচ্ছে। ছয় লাখ টাকার এই সংস্কারকাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে করা হচ্ছে। এই কাজ করার জন্য প্রত্ননিদর্শনগুলো বারান্দার গ্যালারি থেকে নামিয়ে নিচে রাখা হয়েছে। এগুলো মেঝেতে ফেলেই নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। দেয়াল চটানোর সময় সব ধুলা প্রত্ননিদর্শনের গায়ে পড়ছিল। এ অবস্থায় কেউ একজন ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন। ২৩ আগস্ট (বুধবার) তা ভাইরাল হয়।

সেই ভিডিও দেখে ২৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিকেলে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে প্রহরী জাদুঘরের পরিচালকের একটি ভিজিটিং কার্ড হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবেদককে অনুমতি নিতে বলেন। অনুমতি নিয়ে শনিবার সকালে গেলে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়।

শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় টাইলস লাগানোর কাজ চলছে। বারান্দার গ্যালারি থেকে কিছু প্রত্ননিদর্শন সিঁড়ির নিচে রেখে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ প্রত্ননিদর্শনই ওই বারান্দায় রাখা হয়েছে। নীল রঙের পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে মেঝেতেই ফেলে রাখা হয়েছে। কোনোটাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে। কোনোটাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। আশপাশে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি।

এ ব্যাপারে জাদুঘরের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, প্রত্ননিদর্শনগুলো সরিয়ে অন্য কোথাও রাখার জায়গা নেই। এ ছাড়া একেকটি মূর্তির অনেক ওজন। এগুলো সরাতে গেলে যদি এর কোনো একটি কারুকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেটি আর ফেরত পাওয়া যাবে না। যেগুলো সহজে সরানো যায়, সেগুলো বারান্দা থেকে নিয়ে তাঁরা সিঁড়ির নিচে রেখে দিয়েছেন। সংস্কারকাজ শেষ হলে আবার প্রতিস্থাপন করবেন। তিনি আরও বলেন, ১৭ হাজার প্রত্নবস্তু গ্যালারিতে রাখতে হলে এ রকম আরও একটি জাদুঘর লাগবে। শুধু সরকারের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। যাঁরা বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাঁদের এ কাজে এগিয়ে আসা উচিত।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের সংস্কারকাজ করার সময় জাদুঘরের সংশ্লিষ্ট গ্যালারি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এর নানামুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অন্যদিকে ভারী মূর্তিগুলো সরানোও সহজ নয়। এগুলো সরাতে গেলে যদি কোনো ক্ষতি হয়, সেটা অপূরণীয় ক্ষতি হবে। কারণ, টাকা দিয়ে এর মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এগুলো অমূল্য সম্পদ। তাই যত্নসহকারে মোটা চট দিয়ে ঢেকে রেখে সংস্কারকাজ করা উচিত ছিল। তা ছাড়া দেয়াল চটানোর সময় ইট-পাথরের টুকরা পড়েও এর ক্ষতি হতে পারে। সাবধানতার সঙ্গে কাজ করা দরকার।

জাদুঘরে স্থানসংকটের বিষয়ে আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, পৃথিবীর কোনো জাদুঘরেই সব নিদর্শন গ্যালারিতে দেওয়া থাকে না। পর্যায়ক্রমে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। এটা সংগ্রহশালা, তাই এটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখতে হয়। তাই বলে আরেকটি জাদুঘর বানানোর দরকার পড়ে না। যত্নে রাখলে এসব জিনিসও ভালো থাকবে।