রোডমার্চ কর্মসূচির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বরিশাল: বরিশাল থেকে বিএনপির দক্ষিণাঞ্চলীয় রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বিভাগের ছয় জেলা, মহানগর এবং ৪২টি উপজেলার বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতা-কর্মী অংশ নিয়েছেন। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে এই কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও দূরদূরান্তর জেল উপজেলার নেতা-কর্মীদের পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তা শুরু হয়।
রোডমার্চ কর্মসূচিকে ঘিরে সকাল থেকেই বিভাগের জেলা-উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমবেত হতে থাকেন। এ ছাড়া গতকাল শুক্রবার রাতেই অনেক স্থান থেকে নেতা-কর্মীরা বরিশালে এসে অবস্থান নেন। ভোরেই কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে বরিশাল পৌঁছান। বেশ কয়েকজন নেতা রোডমার্চ কর্মসূচির প্রস্তুতি ও সমন্বয় করার জন্য কয়েক দিন আগে থেকেই বরিশালে অবস্থান করছিলেন।
রোডমার্চ শুরুর আগে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নির্মিত মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সমাবেশে তিনি বলেন, দেশ বর্তমানে এক দুঃসময় অতিক্রম করছে। সরকারের সীমাহীন লুটপাট, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে সাধারণ মানুষ হালাল উপার্জন করে পেট চালাতে পারছে না। এসব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ করলে হামলা-নির্যাতন হয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, বিচার হয়। এমন অবস্থায় দেশ চলতে পারে না। এই অবস্থা থেকে দেশকে, দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।
সমাবেশে দলটির এই বর্ষীয়ান নেতা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ এনে বলেন, সরকার মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি-লুটপাট করেছে। নিজেদের লোভের জন্য ঋণ এনে এসব প্রকল্প করে দেশকে ঋণে জর্জরিত করেছে। এখন একটি শিশু জন্ম নিলে সদ্যোজাত সেই শিশুকে এক লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্মাতে হয়। এই হচ্ছে সরকারের উন্নয়ন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতেই আজকের এই রোডমার্চ কর্মসূচি।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এই সরকার দেশের সাংবিধানিক সব ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সংবিধানকে ধ্বংস করেছে। দেশের অর্থনীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকার সবকিছু আজ ভূলুণ্ঠিত। তাই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করার জন্য এই রোডমার্চ।
সমাবেশে বিএনপি আরেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও রোডমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির দলনেতা হারুন অর রশিদ বক্তব্য দেন।
দলীয় নেতারা বলেন, বরিশাল নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে রোডমার্চ শুরু হয়ে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড হয়ে রোডমার্চটি ঝালকাঠি এলজিইডি মোড়, রাজাপুর হয়ে পিরোজপুরের শিয়ালকাঠি এলাকায় গিয়ে শেষ হবে। পথে বেশ কয়েকটি জায়গায় পথসভা হবে।
রোডমার্চ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। এ ছাড়া রোডমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির দলনেতা ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ, সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান, সহকারী সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হকসহ দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয়, জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা অংশ নিচ্ছেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত রোডমার্চ ও সমাবেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে দলটি। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে রোডমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।