রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোয় ‘প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর বাবদ’ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৫০ টাকা করে ফি আদায়ের প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেছে ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছন থেকে এ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। 

বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ফি নেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। তারা বলছেন, ‘প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর বাবদ’ নয় বরং হলের ‘উন্নয়ন বা বিবিধ ফান্ড’ খাতে ফি নেওয়া হচ্ছে।

মশাল মিছিল করা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠনগুলো হচ্ছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র গণমঞ্চ ও ছাত্র যুব আন্দোলন।

মিছিলে তারা ‘শিক্ষার্থীদের টাকা মেরে, প্রশাসন পকেট ভরে।’ ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘স্বাক্ষরের নামে হয়রানি, বন্ধ কর, বন্ধ কর’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন।

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হল প্রশাসন ৫০ টাকার বিনিময়ে স্বাক্ষর বিক্রি করছে। প্রশাসন তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্লজ্জের মতো কাজ করছে। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা এবং আবাসিকতা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রশাসন ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে ছাত্রলীগকে সহায়তা করে থাকে। এর ব্যত্যয় হলেই ছাত্রলীগ প্রশাসনের প্রতি আঙুল তুলে। সম্প্রতি মন্নুজান হলের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশী এর প্রমাণ দিলেন।’

বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘আমরা ভর্তির সময়ে হলের তৈজসপত্র কেনার জন্য টাকা দেই। আজকের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের নোটিশে আবার দেখলাম, তৈজসপত্র কেনার জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাহলে আমাদের টাকাগুলো কোথায় যায়? আমরা যখন হলের খাবারের সমস্যা নিয়ে কথা বলি, তখন তারা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী খাবারে ভর্তুকি দেওয়ার কথা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে তো রাকসু ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার কথা। সেটি কেন দিচ্ছেন না?’

এই প্রশাসন বিগত দুই বছরে তেমন কোনো সমস্যারই সমাধান করতে পারেনি। এই প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অক্ষম। তিনি এই প্রশাসনের পদত্যাগের দাবি জানান। পাশাপাশি অনতিবিলম্বে এই অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধের দাবি জানান তিনি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল রাতুল বলেন, প্রশাসন স্বীকার করেছে, ২০২২ সাল থেকে এই ফি চালু করেছে হল প্রশাসন। কিন্তু এই ফি নেওয়ার কোনো কারণও জানায়নি তারা। যখন ছাত্ররা এসব বিষয়ে কথা বলছ, তখন তারা এসব বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে জানাচ্ছে। আমাদের যে ভর্তুকির কথা বলা হয়, সেগুলো আমাদেরই পকেট কেটে নেওয়া হচ্ছে। হলের ৫০০ সিট ছাত্রলীগ দখল করে আছে। আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে কীভাবে হলে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়? এর জবাব না পেলে আমরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।

প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক জয়ন্তী রানী বসাক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রাধ্যক্ষদের স্বাক্ষর বাবদ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়া প্রসঙ্গে কয়েকদিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কতিপয় শিক্ষার্থীর বিভ্রান্তিকর মন্তব্য প্রাধ্যক্ষ পরিষদের নজরে এসেছে। অনেক শিক্ষার্থী এই ৫০ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে অপ্রত্যাশিত ও অশোভন মন্তব্যও করেছে।

বিজ্ঞপ্তি আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে পরীক্ষার ফরম পূরণকালে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে হলের উন্নয়ন বা বিবিধ ফান্ডের মাধ্যমে এই অর্থ নেওয়া হচ্ছে। যা হলের শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেমন, বাৎসরিক অনুষ্ঠান, ডাইনিং কর্মচারীদের বেতনের ভর্তুকি, তৈজসপত্র ক্রয়সহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে ব্যয় করা হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকেই এসব বিষয়ে সম্পর্কে অবহিত নয় বলেই এমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।