রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অবৈধভাবে কারখানা বসিয়ে সিসা সংগ্রহ

ব্যাটারি গলিয়ে সিসা তৈরির কারখানাটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা। সেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ছয়ঘাটি গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অবৈধ কারাখানায় পুরোনো ব্যাটারি থেকে সিসা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। দিনে এই কারখানার কর্মীরা কোনো কাজ করেন না। সারা রাত ধরে তাঁরা ব্যাটারি গলানোর কাজ করেন। এই অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন। 

উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ছয়ঘাটি গ্রামে ওই কারখানাটির অবস্থান। গ্রামের বসতবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কারখানাটি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ২৫ জন কর্মী কাজ করেন। 

গত শনিবার দুপুরে ছয়ঘটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার দরজা বন্ধ। বাইরের কোনো লোকজনকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কারখানার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, কারখানার ভেতরে কর্মচারীদের ঘুমানোর জন্য চার-পাঁচটা বড় বড় চৌকিতে বিছানা পাতা রয়েছে। আর সামনের আঙিনায় ব্যাটারি গলানো সরঞ্জাম ও অন্যান্য মালামাল ফেলে রাখা হয়েছে। কয়েকজন কর্মী বলেন, দিনের বেলা কোনো কাজ হয় না। সারা রাত ব্যাটারি গলানোর কাজ করেন। এখানকার কর্মীদের বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়। এই কাজে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে কি না, এ ব্যাপারে তাঁরা সচেতন নন। তাঁরা বলেন, কোনো কাজ না পেয়ে নিরুপায় হয়ে তাঁরা এই কাজে এসেছেন।

তিন বছর আগে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামের পূর্ব পাশে মাঠের মধ্যে এ রকম একটি কারখানা তৈরি করা হয়েছিল। সেই কারখানার ক্ষতিকর প্রভাবে এলাকার গাছপালা মরে যাচ্ছিল। তখন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর প্রশাসন কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। 

মাস দেড়েক আগে গোদাগাড়ী উপজেলার ছয়ঘাটি গ্রামে আবারও এই অবৈধ কারখানা চালু হয়েছে। কারখানাটির চারদিক টিন দিয়ে ঘেরা। বাইরে থেকে কিছু দেখা যায় না। তবে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গেলে উৎকট গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। রাতে কারখানার ভেতর থেকে আগুনের শিখা ওপরের দিকে উঠে যায়। স্থানীয় লোকজন জানান, দূর থেকে দেখলে মনে হয় কোনো বাড়িতে আগুন লেগেছে।

ছয়ঘাটি গ্রামের একজন গৃহবধূ বলেন, রাতের বেলায় এদিকে বাতাস এলে খারাপ গন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারটা এখনো বুঝতে পারেননি।

পাশের চৈতন্যপুর গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এক দিন রাতে এমন গন্ধ, সব মানুষের ঘুম ভেঙে গেল। আমরা সারা গ্রাম খুঁজে বেড়ালাম কোথাও খারাপ কিছুতে আগুন লেগেছে কি না। গ্রামে কোথাও কিছুতে আগুন লাগার কোনো আলামত পাওয়া গেল না। পরে জানা গেল ওই কারখানায় সিসা গলানোর গন্ধে গ্রামের লোকজন ঘুমাতে পারছেন না। ইতিমধ্যেই কিছু কিছু ধানের গাছের ডগা পুড়ে যাচ্ছে। এই কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই ধানের ক্ষতি হচ্ছে।’

কারখানাটির মালিক শাহিনুল ইসলামের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় তাঁর ব্যাটারির দোকান আছে। তিনি বলেন, তাঁর দোকান থেকেই পুরোনো ব্যাটারি সংগ্রহ করেন। সেগুলো এই কারখানায় নিয়ে গলিয়ে সিসা বের করে নেন। এই সিসা আবার ব্যাটারি কারখানাতে ফেরত যায়। 

কারখানা স্থাপনের আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে শাহিনুল ইসলাম বলেন, এই কাজের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো অনুমতি দেয় না। গায়ে হাত বুলিয়ে হাত-পা ধরে এই কাজ করতে হয়। আর পরিবেশের ক্ষতির ব্যাপারে তিনি বলেন, জনবসতি থেকে অনেক দূরে মাঠের মধ্যে করা হয়েছে। এতে মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। আর কারখানার বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে মাটির নিচে পাঠিয়ে দেন। এ জন্য আশপাশের ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। কারখানাটা মাঝেমধ্যে চলে, মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে।

দেওপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি দেখেছেন এখানে একটা কারখানা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ নিয়ে আসতে শুরু করেছেন। ৩১ আগস্ট শোক দিবসের কর্মসূচি রয়েছে। সে জন্য এর মধ্যে তিনি মালিকের সঙ্গে বসতে পারেননি। এই কর্মসূচি শেষ হলে এ বিষয়ে একটা ব্যবস্থা নেবেন। 

অবৈধকার খানার ব্যাপারে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) আতিকুল ইসলাম বলেন,তাদের যদি লাইসেন্স না থাকে এবং কারখানাটি যদি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।