বাবাকে হত্যা মামলায় জামিনে বেরিয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

প্রতিনিধি রাজশাহী: স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছিলেন। বাধা দিলেন বাবা। ভ্যানচালক মুরাদ আলী তখনই বাবাকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এটি গত বছর জানুয়ারি মাসের ঘটনা। দুই মাস আগে সেই মামলায় জামিনে বের হয়ে আসেন মুরাদ। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তিনি সেই স্ত্রীকেই হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগেরবারও তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর পালিয়েছিলেন। এবারও পালিয়েছেন। তাঁর দুই শিশুসন্তান এখন শুধুই কাঁদছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের তাঁতারপুর গ্রামে। মুরাদ আলী (৩৫) ওই গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে। গতকালের ঘটনায় খুন হন মুরাদের স্ত্রী শিলা খাতুন (২৭)। পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে চারঘাট থানায় নিয়েছে। বুধবার বিকেলে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল। এ ঘটনায় তাঁর ভাই দুলাল হোসেন বাদী হয়ে চারঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।

চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিদ্দিকুর রহমান মামলার এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, মুরাদ আলীর স্ত্রীর নামে ১০ কাঠা জমি আছে। হাজত থেকে বের হয়ে আসার পর মুরাদ আলী সেই জমি বিক্রি করে তাঁর হাতে টাকা তুলে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন। এ ঘটনার জের ধরে গলায় বেল্ট জড়িয়ে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর স্ত্রীর গলায় দাগ আছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান ওসি।

মুরাদের ভাইয়ের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নিহতের দুই ছেলে মাহিম (১০) ও মোস্তাফিজের (৩) কান্না শুনে তিনিসহ আরও কয়েকজন প্রতিবেশী ছুটে যান। গিয়ে দেখেন শিলা খাতুন বাড়ির নলকূপের পাশে পড়ে আছেন আর ঘরে দুই শিশু কান্নাকাটি করছে। তাঁরা শিলাকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ পাননি। শিলার বড় ছেলে মাহিম তাঁদের জানায়, তার বাবা কোমরের বেল্ট খুলে মায়ের গলা পেঁচিয়ে ধরে রেখেছিলেন। এরপর ঘর থেকে চুল ধরে টেনে নলকূপের পাশে রেখে গেছেন। সব শুনে প্রতিবেশীরা সবাই মিলে শিলাকে উদ্ধার করে রাত দুইটার দিকে পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মুরাদের প্রতিবেশীরা বলেন, মাস দুয়েক আগে জেল থেকে জামিনে আসার পর থেকে তিনি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েন। স্ত্রী শিলাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য প্রায়ই মারধর করতেন। বাড়িতে চাল না থাকার কথা বলায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও শিলাকে মারধর করেন। পরে সবাই ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটান তিনি।

এর আগে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বাবা সাদেক আলীকে (৫২) রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে মুরাদের বিরুদ্ধে। সে সময় ভ্যানচালক মুরাদ আলীর ছোট ছেলের বয়স ছিল এক বছর। সবকিছু খেতে পারত না বলে শিশুটিকে পোলাওয়ের চালের জাও রান্না করে খাওয়ানো হতো। মুরাদ আলী একদিন রাতে চাল ছাড়াই বাড়ি ফেরেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ হয়। পরদিন সকালে ছেলের খাবার নেই বলতে গেলে মুরাদ স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। বাবা সাদেক আলী স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে পাড়ার মাতব্বরের কাছে বিচার দিতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় উত্তেজিত মুরাদ পেছন থেকে বাবাকে রড দিয়ে আঘাত করেন। ঘটনাস্থলেই বাবা মারা যান। পলাতক মুরাদকে ২৩ দিন পর পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।