সিলেট মহাসড়কে ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচির উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি ভৈরব: ‘সরকার পতনের এক দফা’ দাবিতে বিএনপির কেন্দ্র-ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচিকে ‘ডু অর ডাই’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ভৈরব থেকে সিলেটের উদ্দেশে রোডমার্চ কর্মসূচির উদ্বোধনী পর্বে তিনি নেতা-কর্মীদের যেকোনো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভৈরবে উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা তো লগি-বইঠা দিয়ে মানুষ মারি না। আমরা তো আগুন দিয়ে মানুষ মারি না। আমরা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াই না। আমরা তো পথচারীদের বস্ত্র হরণ করি না। আমরা হরতাল দিই না।’ এরপর তিনি উপস্থিত নেতা-কর্মীদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘আমরা হরতাল দিলে আপনারা হরতাল পালন করবেন? দরকার আছে? হরতালের দরকার আছে? আন্দোলন করার দরকার আছে?’ এ সময় নেতা-কর্মীরা সমস্বরে ‘আছে, আছে’ বলে জবাব দেন।

এরপর গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘ঠিক আছে রায় পাইলাম। আমরা এখনো (হরতাল) করি নাই। আর করব না, এমন প্রতিজ্ঞাও করি নাই। সুতরাং জনগণের চাপের কারণে আজকে হরতাল অবরোধ থেকে আরম্ভ করে... এই অচল সরকারকে মাটিতে বসিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা দরকার আগামী দিনে কর্মসূচি থাকবে।’ গয়েশ্বর আরও বলেন, ‘আমাদের এবারের আন্দোলন ডু অর ডাই। হয় মরব, নয়তো লড়ব। দেশের মানুষকে মুক্ত করব, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব এবং দেশের মালিকানা দেশের মানুষের হাতে ফেরত দেব।’

দিনের ভোট আর যেন আগের দিনের রাতে না হতে পারে, সে বিষয়ে নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন গয়েশ্বর রায়। তিনি বলেন, এখন দেশের সবকিছুর দাম বাড়ছে। কমছে শুধু দুটির দাম। এর একটি শেখ হাসিনা আর অপরটি আওয়ামী লীগ। এই সরকারের সময় দেশ থেকে ১৫ হাজার কোটি অর্থ পাচার হয়েছে। তারেক জিয়ার নেতৃত্বের প্রশংসা করতে গিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারেক জিয়া দেশের বাইরে থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলে সরকারের ১০৪ ডিগ্রি জ্বর হয়ে যায় আর দেশে থাকলে কী হতো কে জানে।’

‘এক দফা’ দাবিতে ঢাকার দুই প্রান্ত টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জে সমাবেশের পর আজ সিলেট মহাসড়কে ‘রোডমার্চ’ করছে বিএনপি। কর্মসূচির শুরু হয়েছে ভৈরব থেকে। ভৈরব ছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা এসে উদ্বোধনী সমাবেশে যোগ দেয়। বেশির ভাগ কর্মীদের হাতে ছিল জাতীয় কিংবা দলীয় পতাকা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা সমাবেশে যোগ দেন। একপর্যায়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এক পাশ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণে উভয় পাশে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্মসূচিস্থলের আশপাশের কোথাও পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য দৃশ্যমান ছিল না। বিএনপি নেতারা বলছেন, রোডমার্চ কর্মসূচির প্রস্তুতি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক কোনো বাধার সম্মুখীন তাঁরা হননি।

ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় হওয়া সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ৫০ লাখ গায়েবি মামলা নিয়ে আছি। প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে দিতে সময় পার হয়ে যায়। এই সরকার বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিচারকেরাও এখন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রধান বিচারপতি ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে ফুল নেন। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগ থেকে সাধারণ মানুষের অবশিষ্ট আস্থাও শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে মার্কিন ভিসানীতিতে বিচারকদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। র‍্যাবের বিরুদ্ধে সেকশন দেওয়া হয়েছে।

আমীর খসরু বলেন, এই আন্দোলন শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, ভোট চুরিতে যারা সহযোগিতা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও। দুর্নীতিবাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেও।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান, খায়রুল কবির, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ এমরান সালেহ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, ভৈরব উপজেলা বিএনপি সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান প্রমুখ।

সভা শেষে দুপুর ১২টার দিকে রোড মার্চের অন্তত অর্ধশত গাড়ি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।