টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা: আইজিপি

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রংপুর: বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা। টেকসই নিরাপত্তা থাকলে টেকসই শান্তি আসবে, টেকসই শান্তি থাকলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। আমরা এই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। আরও বহুদূর যেতে হবে।’

সোমবার দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার কমান্ডেন্ট বাসুদেব বণিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাসিবুর রশিদ।

বাংলাদেশে এক সময় জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের হোলি খেলা শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন আইজিপি। সারা দেশে একসঙ্গে ৬৩ জেলায় বোমা হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই অবস্থা থেকে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেন। আমাদের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের লোকবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। দেশকে ডিজিটালাইজড করেছেন। আমরা এখন জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সক্ষমতা অর্জন করেছি। দেশে আজকে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকায় দেশের সবদিকে একটা উন্নয়নের জোয়ার বইছে বলে মন্তব্য করেন আইজিপি। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন এ দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলার। আর এখন আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩০০০ ডলার, আমাদের উন্নতি হয়েছে। আমি যখন নীলফামারীতে ছিলাম ওই সময় একজন পুলিশ সুপার হিসেবে যে বেতন পেতাম, তা দিয়ে নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না। আগে একটা বিমান ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে সৈয়দপুরে আসত, তারপর আবার রাজশাহী হয়ে ঢাকায় ফিরত। আর এখন সৈয়দপুর থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ১৮টি ফ্লাইট চলাচল করছে। এর মানে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে।’

দেশের অন্যান্য জায়গার মতো রংপুরেও মাদক, জুয়া ও যানজট অন্যতম সমস্যা বলে জানান আইজিপি। এসব বিষয়ে নাগরিকদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাদকের জন্য আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, সেটা নজর রাখতে হবে। অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো ও প্রত্যেক নাগরিককে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পুলিশিং বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চান পুলিশের এই মহাপরিদর্শক।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন র‍্যাব-১৩–এর অধিনায়ক আরাফাত ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোছাদ্দেক হোসেন।

এর আগে বেলা ১১টায় রংপুর নগরীর সুরভি উদ্যানের সামনে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এরপর সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে অংশ নেন অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেককাটা পর্ব শেষে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গৃহীত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ ছাড়া মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি গাড়ি উপহার দেয় কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম।