রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: দীর্ঘ সাত বছর পর রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর ধারে সড়কে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

উদ্বোধনকালে শেখ ফজলে শামস বলেন, ‘নতুন নেতৃত্ব কেবল দল বা কর্মীবান্ধব হলে চলবে না, হতে হবে জনবান্ধব। সমাজের বঞ্চিত মানুষের যিনি পাশে থাকেন, আপন করে নেন, তিনি হচ্ছেন জনবান্ধব নেতা। আবার ভূমিখেকো, দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসীদের কাছে প্রিয়, এমন তথাকথিত জনপ্রিয় নেতাদের দরকার নেই। সেই রকম নেতৃত্ব দরকার, যাঁরা স্বপ্রণোদিতভাবে, সক্রিয় থেকে নতুন ভোরে আলো ছড়াবেন। নব সম্ভাবনা জাগ্রত করবেন।’

যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে নেতা–কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে ফজলে শামস বলেন, ‘আমাদের অগ্রগতির পথে দুইটা অন্তরায়। একটা হচ্ছে স্বাধীনতা বিপক্ষের শক্তি বিএনপি–জামায়াত; দ্বিতীয় শত্রু হচ্ছি আমরা নিজেরাই। আমরা নিজেরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। আমাদের নিজেদের নিষ্ক্রয়তা, অলসতা, অসততা, অনৈক্য, ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, হিংসা-প্রতিহিংসা আমাদের প্রধান শত্রু। আমাদের যদি আল্লাহ না করুক, জানুয়ারিতে পা পিছলে যায়, আমরা বিএনপি-জামায়াতের কাছে পরাজিত হব না। আমরা পরাজিত হব আমাদের নিজেদের কাছে।’

রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে অতিথিরা। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, বেগম আখতার জাহান সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত আছেন মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলার সভাপতি অনিল কুমার সরকার, জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াদুদ দারা, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. ডাবলু সরকার, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল, সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, এনামুল হক, মো. মনসুর রহমান, মো. আয়েন উদ্দিন; সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা প্রমুখ।

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি মো. রমজান আলী। সঞ্চালনা করছেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন ও জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী আজম।

রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই নগর ও জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে রাজশাহী শহরে আসেন। সকাল ১০টার মধ্যেই সম্মেলনস্থল নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে ভরে যায়। পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত হতে থাকেন। এরপর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন শিল্পীরা। সর্বশেষ বেলা দেড়টার দিকে স্থানীয় বক্তারা মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ মার্চ মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দ্বিতীয়বার রমজান আলীকে সভাপতি ও মোশাররফ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়। প্রায় দুই যুগ ধরে রাজশাহী মহানগর যুবলীগ তাঁদের হাতেই আছে। প্রায় সাত বছর পর হতে যাওয়া সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮টি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০টি, সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮টি আবেদন আছে।

এদিকে রাজশাহী জেলা যুবলীগেরও প্রায় একই সময়ে সম্মেলন হয়েছিল। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ। সে সময় দ্বিতীয়বার আবু সালেহকে সভাপতি ও খালিদ ওয়াসিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। খালিদ ওয়াসি মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন আলী আজম। আবু সালেহ ২০০৪ সালে প্রথম জেলা যুবলীগের সভাপতি হন।