ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর দুর্বৃত্তরা পাথর ছোড়ার পর ট্রেনটি কাশিনাথপুর স্টেশনে এসে দাঁড়ায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি বেড়া: পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর থেকে রাজশাহীর মধ্যে ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হওয়ার পর পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তদের ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার কারণে সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ট্রেনটিতে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে পাথর ছোড়ার ঘটনায় আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। এতে ট্রেনে উঠে চরম আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।

১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে এই ট্রেন পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া স্টেশন থেকে সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্ধ স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এলে মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে সাত-আটজন যাত্রী আহত হন। ট্রেনটি এ সময় রাজশাহী থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচরে ফিরছিল।

ওই ট্রেনে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিয়মিত যাত্রীরা জানান, এমন পাথর নিক্ষেপের ঘটনা নিয়মিত ঘটে চলেছে। এতে যাত্রীরা যেমন আহত হচ্ছেন, তেমনি ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙে রেলওয়ে বিভাগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনসহ নতুন রেলপথের উদ্বোধন করা হয়। এর কিছুদিনের মধ্যে যাত্রীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের শিকার হতে থাকেন। এর মধ্যে পাথর নিক্ষেপের সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা ট্রেনে মুহুর্মুহু পাথর নিক্ষেপ করলে ১০ জনের বেশি যাত্রী গুরুতর আহত হন ও ট্রেনের ১৮টি জানালার কাচ পুরোপুরি ভেঙে যায়। এরপর পুলিশি তৎপরতা ও জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা কিছুটা কমে যায়। তবে গত এক মাসে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা আবার বেড়ে গেছে। এই এক মাসে ২০ বারের বেশি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্ধ্যার পর অন্ধকার হলে দুবলিয়া থেকে তাঁতিবন্ধ স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে এই পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর ট্রেনের দুই দিক থেকেই পাঁচটি বগি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়।

১২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা বলতে গিয়ে ট্রেনের যাত্রী কলেজছাত্র মাসুদ রানা (২০) বলেন, ‘দুবলিয়া স্টেশনে মিনিট দুয়েক দাঁড়ানোর পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে ট্রেন ছাড়ে। সামনেই তাঁতিবন্ধ স্টেশন। চারদিকে তখন অন্ধকার। আমি ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। বেশ জোরেই ট্রেন চলছিল। হঠাৎ বাঁ হাতের কনুইয়ের কাছে তীব্র আঘাত পাই। দেখি, হাতে প্রায় ২০০ গ্রাম ওজনের একটা পাথর আঘাত করেছে। এরপর বৃষ্টির মতো পাথর ট্রেনে আঘাত করতে থাকে। ট্রেনের যাত্রীরা আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। জানালা বন্ধ করতে করতেও পাথরের আঘাত পান। পাথরের আঘাতে আমার হাত ব্যাপক ফুলে যায়। আমার ভাগ্য ভালো যে পাথরটি মাথায় বা চোখে লাগেনি।’

ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্ট একরাম হোসেন জানান, সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা অংশে ট্রেন ঢোকার পরেই তাঁদের পাথরের ভয়ে থাকতে হয়। ১২ তারিখ তাঁর গায়েও পাথর লেগেছে। এতে তিনি প্রচণ্ড ব্যথা পেলেও ভাগ্যের জোরে বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন।

এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। পাথর যারা ছোড়ে, তাদের চিহ্নিত করা ও শাস্তি দেওয়া কঠিন। এর আগে আমরা কয়েকবার পাথর ছোড়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে ধরেছিলাম। কিন্তু এদের প্রায় সবাই ছিল কিশোর বয়সী। কম বয়সী হওয়ায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। সামাজিক সচেতনতা ছাড়া এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এরপরও আমরা এসব দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’