সম্মেলনকে সামনে রেখে রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাকে মারধর

ভুক্তভোগী যুবলীগের নেতা আনোয়ার হোসেন ওরফে মানিক। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে যুবলীগের এক নেতাকে মারধর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার দায়রাপাক মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মারধরের শিকার ওই নেতার নাম আনোয়ার হোসেন ওরফে মানিক। তিনি মহানগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির জনশক্তি ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক এবং আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রত্যাশী তৌরিদ আল মাসুদ ওরফে রনির অনুসারী। মানিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নিম্নমান সহকারী। তাঁর বাড়ি নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকায়।

মানিক বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর মাথায়, ঘাড়ে, পিঠে ও হাতে আঘাতের চিহ্ন আছে। আজ শুক্রবার দুপুরে মানিক বলেন, ছোটবেলা থেকে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সামনে যুবলীগের সম্মেলন। এতে রনির সমর্থক হিসেবে তিনি প্রচার চালাচ্ছিলেন। প্রচার শেষে রনির কার্যালয় থেকে গতকাল রাতে দায়রাপাক মোড়ে এলে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলে আসা কয়েকজন তাঁর গতি রোধ করেন।

মানিক বলেন, তাঁরা প্রথমে সম্মেলনের কথা জিজ্ঞাসা করেন। একপর্যায়ে গালিগালাজ করে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। তরিক পিস্তলের বাঁট দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করেন। আশিক চাকু মারার চেষ্টা করেন। তাঁদের তিনজনের হাতে চাকু আর তিনজনের হাতে পিস্তল ছিল। তখন তিনি ওই এলাকায় একা ছিলেন। পরে এলাকার ছোট ভাইদের সহযোগিতায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কাঁদতে কাঁদতে মানিক বলেন, ‘যারা মেরেছে তাঁরা কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন না। আমি ২৪ বছর রাজনীতি করে কারও কাছ থেকে ১০ টাকাও নিইনি। যুবলীগের রাজনীতি করি বলে মার খেতে হলো। সারা দেশেই আওয়ামী লীগের আসল মানুষেরা মার খাচ্ছে। আমি সুস্থ হয়ে মামলা করব।’

অভিযোগের বিষয়ে তরিক শেখের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ২৬ সেপ্টেম্বর। প্রায় আট বছর পর হতে যাওয়া সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৮টি জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ১০টি, সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮টি আবেদন পড়েছে। সম্মেলন ঘিরে রাজশাহীতে পদপ্রত্যাশী ও সমর্থকদের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা চলছে।

এদিকে হাসপাতালে ভর্তির পর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ মানিকের খোঁজখবর নেন। মানিকের কর্মস্থলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, অধ্যাপক মশিহুর রহমান ও শাতিল সিরাজ হাসপাতালে এসে দেখা করেছেন।

পদপ্রত্যাশী ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ বলেন, ‘মানিক খুব কাছের ভাই। তিনি যুবলীগের একনিষ্ঠ, নিবেদিত ছেলে। তাঁকে যাঁরা মারধর করেছেন, তাঁদের মধ্যে তরিক আগে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ছিলেন। পরে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেন। সম্প্রতি তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। মানিক সুস্থ হয়ে মামলা করবেন।’

নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, গতকাল রাতে ঘটনা শুনে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন। ঘটনার পর রাতেই অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা আছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।