রাজশাহীতে যুবলীগের সম্মেলনে বক্তব্য দেন ফজলে শামস পরশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহী প্রতিনিধি: যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে দুটি অন্তরায়। একটা হচ্ছে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বিএনপি-জামায়াত খুনিচক্র এবং দ্বিতীয় শত্রু কিন্তু আমরা নিজেরাই। আমরা নিজেরাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। নিজেদের নিষ্ক্রিয়তা, অসততা, অলসতা, অনৈক্য, ব্যক্তিগত লোভ-লালসা, হিংসা-প্রতিহিংসা আমাদের প্রধান শত্রু।’

পরশ বলেন, ‘আল্লাহ না করুক, জানুয়ারিতে যদি পা পিছলে যায়, তাহলে আমরা বিএনপি-জামায়াতের কাছে পরাজিত হব না। আমরা পরাজিত হব আমাদের নিজেদের কাছে।’ আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহীর লালনশাহ মুক্তমঞ্চসংলগ্ন রাস্তায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের সবখানে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপরও আমরা যদি বিএনপি-জামায়াতের মিথ্যাচার আর অপপ্রচারের কাছে হেরে যাই, তাহলে এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু থাকে না। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবেন যদি আমরা নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারি।’

পরশ আরও বলেন, ‘যুবলীগের নেতা-কর্মীদের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। এই লক্ষ্যে আমরা তখনই সফল হব, যখন নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ এবং গ্রুপিং বন্ধ করতে পারব। বর্তমান কঠিন বাস্তবতায় নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং এবং বিভক্তি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিজের ভাইয়ের পেছনে না লেগে প্রকৃত শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের প্রকৃত শত্রু স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বিএনপি-জামায়াত।’

তিন মেয়াদে বর্তমান সরকারের অর্জনগুলো প্রচার করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি দিনও অপব্যয় না করে আমাদের আজ থেকেই কাজে লেগে যেতে হবে। দিনের বেলায় রাজপথে সভা-সমাবেশে সক্রিয় থাকতে হবে। সন্ধ্যার পর আপনাদের নিজ এলাকায় শেখ হাসিনার দৃশ্যমান অর্জনসমূহ প্রচার-প্রচারণায় মনোনিবেশ করতে হবে। প্রতিটি আসনের উন্নয়নগুলো তালিকা করে জনগণকে মনে করিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে হবে নির্বাচনের দিন।’

যুবলীগ চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য। আসলে এ দেশের মানুষের দুর্ভাগ্য। যখনই এ দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের সুযোগ দেখা দিয়েছে, তখনই স্বাধীনতাবিরোধীরা এই দেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এখন দুঃখী মানুষেরা একটু সৌভাগ্যের মুখ দেখছে, আবার শুরু হয়েছে এ দেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চক্রান্ত। কিন্তু নির্বাচন বানচালের কোনো ষড়যন্ত্র যুবসমাজ মেনে নেবে না। আর যদি কোনো অনির্বাচিত অথবা অসাংবিধানিক সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর স্বপ্ন দেখে থাকেন, সেই স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না। বাংলাদেশের যুবসমাজ তা হতে দেবে না।’

সম্মেলন প্রসঙ্গে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘সবার মনে প্রশ্ন, কে আসছেন আগামী কমিটিতে। কিন্তু প্রকৃত প্রশ্ন হওয়া উচিত, কেমন হবে আগামীর নেতৃত্ব। কে আসবে নেতৃত্বে সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে কেমন হবে আগামীর নেতৃত্ব। নতুন নেতৃত্বকে শুধু কর্মীবান্ধব বা দলবান্ধব হলে হবে না, হতে হবে জনবান্ধব। আপনারা নিশ্চয় বোঝেন, জনপ্রিয় ও জনবান্ধবের মধ্যে পার্থক্য আছে। জনবিচ্ছিন্ন ও নিষ্প্রভ নেতৃত্ব আমাদের কাম্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা সেই নেতৃত্ব যারা আগামীর নেতৃত্ব সৃষ্টি করবে।’

শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছিল। ২০০৪ সালে এই বাগমারা থেকে উত্থান হয়েছিল জেএমবির। দুই যুগ পরও এখনো রাজশাহীর মানুষের জেএমবির আতঙ্ক নিশ্চয় মুছে যায়নি। বিএনপি-জামায়াত আমাদের বলে, আমরা নাকি অত্যাচারী এবং কর্তৃত্ববাদী সরকার। হাস্যকর, হাস্যকর ছাড়া আর কিছু বলার নাই। এসব মিথ্যাচার করে তারা আমাদের সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ঘুমন্ত নেতৃত্ব দিয়ে এখন আর আমাদের চলবে না। এখন দরকার অ্যাকটিভ নেতৃত্ব, যারা মিথ্যাচারের জবাব দেবে।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

এ ছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল, জেলার সভাপতি অনিল কুমার সরকার, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, মহানগরের ডাবলু সরকার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক, রাজশাহী-৫ আসনের ডা. মনসুর রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন।

সম্মেলনে বিশেষ বক্তা ছিলেন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা ও রফিকুল আলম সৈকত জোয়ারদার। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী। সঞ্চালনা করেন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আযম সেন্টু।