পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভ। রোববার দুপুরে রাজশাহী আদালত চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে বের হয়ে এসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা। রোববার বেলা দেড়টার দিকে রাজশাহী আদালত চত্বরে ‘বাঘা-চারঘাটের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম কর্তৃক আর কত নির্যাতন সইব?’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বাঘা পৌরসভার মেয়র মো. আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ করা হয়। তিনি আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন।

এদিকে আওয়ামী লীগের ওই নেতা-কর্মীদের বিপরীত পাশে অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সমর্থকেরাও বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে তাঁদের হাতে কোনো ব্যানার ছিল না। তাঁরা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নামে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য দেয়াল হয়ে ছিলেন। আক্কাছের নেতৃত্বে মামলার আসামি নেতা-কর্মীরা একপাশ দিয়ে মিছিল করেন, অন্য পাশে শাহরিয়ার আলমের সমর্থকেরা মিছিল করেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁরা মুখোমুখি হননি।

আক্কাছের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘রাজপথ ছাড়ি নাই, শেখ হাসিনা ভয় নাই’। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটনের নাম ধরেও স্লোগান দেন তাঁরা। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে মিছিলটি আদালত চত্বরের পাশে রাখা বাসের দিকে চলে যায়। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমর্থকদের মিছিল আদালত প্রাঙ্গণের ভেতরে থেকে যায়।

আদালত থেকে বের হয়েই আক্কাছ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বাঘার মেয়র ছিলাম। আবার নির্বাচিত হয়েছি। আমি জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। আমাদের অন্তত ১০০ পরিবারের নামে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাতটা মামলা দিয়েছেন। মামলাগুলো একেবারেই মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। প্রতিমন্ত্রী তাঁর লোকজনকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। আমরা আজকে সেই মামলায় হাজিরা দিলাম। প্রতি মাসে কমপক্ষে ছয়-সাতবার বাস ভাড়া করে আসি। মামলার আসামিরা সবাই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের। এই মিথ্যা মামলাগুলো যেন প্রত্যাহার করা হয়।’

আওয়ামী লীগের ওই নেতা-কর্মীদের বিপরীত পাশে অবস্থান নিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সমর্থকেরাও বিক্ষোভ মিছিল করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাঘা-চারঘাটে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়েও কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘যে মানুষটি শত শত কর্মী-সমর্থকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন, সেই লোককে যদি দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে দলের লোকজন কীভাবে মেনে নেবেন? প্রধানমন্ত্রীকে আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই, তিনিই আমাদের ভরসা। তাঁকে মনোনয়ন দিলে মনে হয় না তাঁর পক্ষে লোকজন কথা বলবেন, সাপোর্ট করবেন, ভোট দেবেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী জিয়াউর রহমান বলেন, বিভিন্ন ধারায় মোট সাতটি মামলা হয়েছে গত ২০২২ ও ২০২৩ সালে বাঘা ও চারঘাট থানায়। মামলায় আসামি মোট ১১৪ জন। সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা। তাঁরা আশা করছেন, আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবেন।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘গত বছর মার্চে আওয়ামী লীগের একটি সম্মেলনে হামলার কারণে আক্কাছকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। সেই সময় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও দলের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নিজের মুখে স্বীকার করেন। তখন তাঁরা সম্মেলনস্থল ভাঙচুর, বিঘ্ন সৃষ্টি ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা বলেছিলেন। ওই সময় মারধরের কারণে একটি মামলা হয়েছে। এর বাইরে কোনো মামলার বিষয়ে ওয়াকিবহাল না। তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করাটা দলীয় সিদ্ধান্ত। ভবিষ্যতে তাঁকে কী করা হবে, আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমার কোনো কথা নেই।’

দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন, তাঁরা একে অপরকে সহযোগিতা করছেন। আমাকে হেয় করার অপচেষ্টা করছেন তাঁরা। এই কাজ তাঁরা ২০০৮ নির্বাচনের আগে করেছে, ২০১৪ সালে একজন প্রার্থী তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। ২০১৮ সালে এই মানুষগুলো কোনো সহযোগিতা করেননি। তাই যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসবে, এই কর্মকাণ্ড তাঁরা করার চেষ্টা করবেন। এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

আদালত প্রাঙ্গণে সমর্থকদের স্লোগানের বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আজকে আবু সাইদ চাঁদের একটি মামলার হেয়ারিংয়ের (শুনানির) তারিখ আছে। এ কারণে বাদীপক্ষ নিয়ে নির্বাচনী এলাকা থেকে বেশ কিছু লোকজন গেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে যখন দেখছে, এ রকম কিছু ঘটছে, তখন তাঁরা তাঁদের অবস্থান জানান দিয়েছেন এমন হতে পারে। আমি ঠিক বেশি কিছু জানি না।’