বিদ্যালয়ের মাঠে বসেছে পশুর হাট। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল ও শনিবার এই হাট বসে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও: পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয়। একটি সরকারি প্রাথমিক অন্যটি বেসরকারি মাধ্যমিক। প্রতিষ্ঠান দুটির মাঠ একটি। সেখানে বসেছে পশুর হাট। চারিদিকে পশুর ডাক আর হাটুরেদের হইহুল্লোড়। এরই মধ্যে চলছে পাঠদান।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অবস্থান। গতকাল মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায় সেখানে পশুর হাট বসেছে। ওই দুই বিদ্যালয়ের মাঠে সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার পশুর হাট বসে। গত শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও গতকাল বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের মাঠে এভাবে হাট বসানোর কোনো সুযোগ নেই। তবে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে মাঠে হাট বসার অনুমতি দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে টাকা এলেও শিক্ষার্থীদের দিনের পর দিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
৩ একর ৭০ শতক জায়গা নিয়ে ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২৮ জন। মাঠের অন্য পাশে রয়েছে কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রয়েছে ১২২ জন। দীর্ঘদিন ধরে এই মাঠে হাট বসছে। আগে মাঠের এক কোণে হাট বসত। এখন পুরো মাঠে হাট বসে।
মাঠের পশ্চিম দিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর উত্তর-পূর্বে উচ্চবিদ্যালয়ের অবস্থান। সকালে গিয়ে দেখা যায় মাঠে বসেছে পশুর হাট। সেখানে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার দর–কষাকষি। একপাশে বেজে চলছে ওষুধ বিক্রেতার মাইক। শ্রেণিকক্ষের বারান্দা থেকে ১৫ ফুট জায়গা রেখে ইটের প্রাচীর তুলে হাট ও বিদ্যালয়কে আলাদা করা হয়েছে। সেই প্রাচীরে বসে হাটের অনেকে ধূমপান করছেন।
দুই বিদ্যালয়ের অন্তত ১২ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসলেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় সপ্তাহজুড়ে। হাট পরিচালনাকারীরা পশুর মল ও আবর্জনা ঠিকমতো পরিষ্কার করেন না। ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে শ্রেণিকক্ষের আশপাশে। সেখান থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়ায়। শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না।
দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শিক্ষার্থী নাসরিন আকতার বলে, গরুর ডাক আর মানুষের চেঁচামেচিতে পড়ায় মন বসে না। হাটের দিনে গরুর মলমূত্রে চারপাশ ভরে থাকে। দুর্গন্ধে ক্লাসে টেকা যায় না। বিদ্যালয়ে যতক্ষণ থাকি, নাক চেপে ধরে রাখি।
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী বন্যা আকতার বলে, ‘স্কুলের এত বড় একটি মাঠ থাকতেও আমাদের প্রাচীরে বন্দী থাকতে হয়। মাঠে যেতে পারি না। স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় হাটের লোকজনের কাছে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অনেকে হাটবার স্কুলে আসে না।’
বিদ্যালয়ের বারান্দায় বসে সিগারেট টানছিলেন এক ব্যক্তি। বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার তা দেখিয়ে বলে, হাটের লোকজন বারান্দায় এসে সব সময় বসেন। সেখানে ধূমপান করেন। তামাকের ধোঁয়ায় তাঁদের কষ্ট হয়।
কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুর রাজ্জাক বলেন, হাটের কারণে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কেউ বিষয়টি দেখছেন না। সবাই হাতে টাকা পাচ্ছেন। আর টাকা পেয়ে ছাত্রছাত্রীদের ওপর দুর্ভোগ চাপিয়ে দিয়েছে।
ইজারাদারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা নেন না বলে জানান কোনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খানম। তিনি বলেন, ‘হাটের কারণে ভোগান্তির শেষ নেই। মাঠটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হওয়ায় আমরা ইচ্ছা করলেই গরুর হাট বন্ধ করার পদক্ষেপ দিতে পারছি না।’
হাট ইজারাদার উত্তম কুমার রায় দাবি, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মাঠে হাট বসেছে। মাঠটি ব্যবহারের জন্য প্রতিবছর উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিতে হয়।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দৌলতপুর সোলেমান খান বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কেশব কুমার চ্যাটার্জি জানান, ‘আমরা মাঠ থেকে হাট সরিয়ে নিতে চেষ্টা চালালেও তা সম্ভব হচ্ছে না। ইজারাদার মাঠে হাট বসার জন্য সামান্য কিছু পরিমাণ টাকা দেন, তা বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যবহার হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি জানলাম। পশুর হাটটি বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সরিয়ে অন্য কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’