পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন মাসুদ রানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আবু বকর ও আরিফুল ইসলামের দোকানে তাঁর প্রায় দেড় হাজার টাকা বকেয়া। এ টাকা চাওয়ায় গত শনিবার দুই দোকানিকেই মারধর করেন মাসুদ রানা ও তাঁর সহযোগী প্রাপ্ত।

আরিফ প্রাথমিক চিকিৎসা নিলেও পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আবু বকর। তবে মারধরের কথা অস্বীকার করে মাসুদ রানা বলেছেন, ‘দোকান দুটির বার্গার খেয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিবাদ করলে আমাদের মারধর করেন তারা।’

কয়েক মাস আগে ট্রিপল ই বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে র‌্যাগিং করলে তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেন। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দীপঙ্কর কুণ্ডুর নেতৃত্বে তিন শিক্ষকের কমিটি তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করলেও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। পরে আর্কিটেকচার বিভাগের প্রথম বর্ষের সব শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে র‌্যাগিং করলেও ছাড় পান জড়িতরা। এরই জেরে সম্প্রতি র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী শিমু রানী তালুকদার। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির ঘটনায় তোলপাড় শুরু হলে অভিযুক্ত পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী রোকাইয়া ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন নির্বিকার। এতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে। ক্যাম্পাসের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রকাশ্যে মারধর, স্বাধীনতা চত্বরের সামনে মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র গোলাম রহমান জয়, ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আসাদুল ইসলাম, ট্রিপল ই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আজিজুল হক ও বঙ্গবন্ধু হলের টর্চার সেলে একাধিক ছাত্রকে নির্যাতন করা হলেও দোষীরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কয়েকদিন আগে ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা চারটি বাসে এসে শহরে তাণ্ডব চালান। শহরের এ হামিদ রোড অবরোধ করে এক মিষ্টির দোকানের কর্মচারীদের মারধর করেন তারা। সম্প্রতি ১২ তলা ভবন থেকে পড়ে দুই নির্মাণ শ্রমিক– তুহিন হোসেন ও আসাদুল আলী মারা যান। এ ঘটনায় প্রকল্পের পিডিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আগেও একইভাবে ১২ নির্মাণ শ্রমিক মারা গেছেন কর্তৃপক্ষের অবহেলায়।

প্রশাসনের কাছে বারবার প্রতিকার চেয়েও সেশনজটের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। তাদের হতাশা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসছে। শিক্ষার্থী অনিকা রহমান বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দিচ্ছেন। অথচ আমরা এখনও চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে।

সূত্র জানায়, উপাচার্যের সরাসরি হস্তক্ষেপে ভন্ডুল হয়ে গেছে শিক্ষক সমিতি ও অফিসার সমিতির নির্বাচন। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ তৈরি করে তিনি কাউকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন; আবার কাউকে প্রাপ্য থেকেও বঞ্চিত করছেন। ১ কোটি ১২ লাখ টাকা ভর্তি পরীক্ষা তহবিলের অর্থ ভাগবাটোয়ারার কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য ও প্রশাসনে তাঁর ঘনিষ্ঠ কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। লিফট কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যসহ ছয় কর্মকর্তার তুরস্ক ভ্রমণ শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে থেমেছে। উন্নয়ন প্রকল্পে শতকোটি টাকা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিরীক্ষা দল।

এসব ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অদক্ষতা ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি হারুনার রশিদ বলেন, ‘এক বাক্যে ক্যাম্পাসের অবস্থা হযবরল।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে কাজ করার চেষ্টা করি। এর পরও কিছু সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি এক ছাত্রীকে র‌্যাগ করার ঘটনায় কয়েকজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্টি র‌্যাগিং কমিটিকে তদন্ত করে পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’

জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক হাফিজা খাতুন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খুবই ভালো চলছে। কোথাও কোনো সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি না।’