নাঈম হোসেন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী গ্রামের তরুণ নাঈম হোসেনকে (২৩) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গ্রেপ্তার এক দম্পতি। গতকাল বুধবার বিকেলে জয়পুরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন রেজ্জাকুল ওরফে রাজ্জাক (৪৩) ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (৩৮)।

পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে নাঈম হোসেনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার দায় স্বীকার করে ভাড়াটে দম্পতি গতকাল বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ধরঞ্জী বাজার এলাকার সামছুল ইসলামের বাড়িতে ৯ সেপ্টেম্বর গোসলখানা নির্মাণের জন্য মাটি খননের সময় মানুষের হাড়গোড় বেরিয়ে আসে। পরে রাত ৯টার দিকে মাথার খুলিসহ বস্তাবন্দী হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। হাড়গোড়ের সঙ্গে থাকা পরনের প্যান্ট দেখে গ্রামের বাসিন্দা গোলাপী বানু সেটি তাঁর ছেলে নাঈম হোসেনের (২৩) লাশ বলে শনাক্ত করেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন নাঈম।

এ ঘটনায় নাঈমের মা গোলাপী বানু তাঁর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ এনে থানায় একটি মামলা করেন। দেহাবশেষ উদ্ধারের পর বাড়ির মালিক সামছুল ইসলামকে আটক করা হয়। এ ঘটনা জানাজানির পর সামছুলের বাড়ির ভাড়াটে দম্পতি রেজ্জাকুল ও তাঁর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ধরঞ্জী গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বগুড়া সদর উপজেলার পীরগাছা এলাকা থেকে ওই দম্পতিকে আটক করেন র‍্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, রেজ্জাকুলের বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামে। বছরখানেক আগে তাঁরা পাঁচবিবি উপজেলার ধরঞ্জী গ্রামের সামছুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস শুরু করেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রেজ্জাকুল বলেছেন, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ধরঞ্জী গ্রামের তরুণ নাঈমের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। একপর্যায়ে স্ত্রীও তাঁর কাছে বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তিনি সেই সম্পর্ক রাখবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এরপরও সাবিনাকে মুঠোফোনে নাঈম বিরক্ত করতেন।

জবানবন্দির বর্ণনা অনুযায়ী, গত ঈদুল ফিতরে রাত ৯টায় দিকে রেজ্জাকুলের ভাড়াবাড়িতে আসেন নাঈম। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫টি ঘুমের ওষুধ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নাঈমকে খাওয়ানো হয়। অচেতন হয়ে পড়লে স্বামী-স্ত্রী মিলে গলায় রশি দিয়ে শ্বাসরোধে নাঈমকে হত্যা করেন। এরপর পরনের শার্ট ও মুঠোফোন আগুনে পুড়িয়ে দেন। এরপর তাঁরা ভাড়াবাড়ির টয়লেটের পাশে ফাঁকা জায়গায় বস্তাবন্দী করে নাঈমের লাশ পুঁতে রাখেন।

জয়পুরহাট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আবদুল লতিফ খান বলেন, নাঈম হোসেন হত্যা মামলার দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে দুই আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।