রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে ডেঙ্গু ও ডায়রিয়ার রোগীকে স্যালাইন দিতে হয় | ফাইল ছবি

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাজারে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়েও ফার্মেসিগুলোতে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইনের জন্য এক ফার্মেসি থেকে আরেক ফার্মেসি ঘুরছেন রোগীর স্বজনেরা। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী বৃদ্ধি, হঠাৎ কলেরা বা ডায়রিয়া বেড়ে যাওয়া এবং নিয়মিত সরবরাহ না থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে না। যদিও রোগীর স্বজনদের বাইরে এসে স্যালাইন কিনতে দেখা গেছে।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে, ডায়রিয়া বা কলেরা হলে অথবা কখনো কখনো রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখার জন্য শিরায় দেওয়া স্যালাইন ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। ডেঙ্গু রোগীদেরও নিয়মিত স্যালাইন দিতে হয়। একজন রোগীকে দিনে এক থেকে দুই লিটার স্যালাইন দিতে হয়, কোনো কোনো রোগীর এর বেশি প্রয়োজন হতে পারে।

রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসংলগ্ন। এ বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্তত ১০টি ওষুধের দোকানে গিয়ে স্যালাইন চাইলে বিক্রয়কর্মীরা দিতে পারেননি। একটি স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি এক রোগীর স্বজন আলী আহসানও স্যালাইনের খোঁজ করছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর ভাতিজার কলেরা হয়েছে। একটু ভালো চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু ওষুধের দোকান ঘুরে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।

কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে ‘আরোগ্য ফার্মেসি’ নামের একটি ওষুধের দোকানে স্যালাইন চাচ্ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন। সবুজ মিয়া নামের ওই ব্যক্তি দাবি করেন, হাসপাতালের নার্সরা স্যালাইন কিনতে পাঠিয়েছেন। সেখানেও স্যালাইন নেই নাকি।

আরোগ্য ফার্মেসির মালিক ও বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি রাজশাহী শাখার সদস্য মো. ফজলুর রহমান বলেন, প্রায় এক মাস ধরে বাজারে স্যালাইনের সংকট রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহীতে কোম্পানিগুলো স্যালাইনই দিচ্ছে না। তারা আশ্বাস দিয়ে বলছে, আগামী রোববার থেকে পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ করবে।

পাশেই আরেকটি ফার্মেসির এক বিক্রয়কর্মী একটু খোলামেলা কথাই বললেন। তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেলে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেছে। তাদের স্টোরে রাখা স্যালাইন ফুরিয়ে গেছে বলেই এত চাহিদা। বৃহস্পতিবার তাঁর দোকানে অন্তত ২০ জনকে স্যালাইন না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করে ওই বিক্রয়কর্মী আরও বলেন, এক সপ্তাহ ধরে ৮০ থেকে ৯০ টাকার স্যালাইন রাজশাহীর বাজারে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তিনি নিজেও বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, তিনিও পাশের জেলা থেকে একটু বেশি দামে কিনেছেন। ভোক্তা অধিকারের অভিযানের পর ব্যবসায়ীরা স্যালাইন রাখছেন না বলেও তিনি জানান।

৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী লক্ষ্মীপুর এলাকার ফার্মেসির দোকানগুলোয় অভিযান চালান। এ সময় ৯০ টাকার স্যালাইন ২০০ টাকায় বিক্রি করার অপরাধে আলিফ লাম মিম ও আরোগ্য নিকেতন নামের দুটি ফার্মেসিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, হাসপাতালে সেভাবে সংকট এখন নেই। রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে না। সামনে রোববার আরও পর্যাপ্ত স্যালাইন আসবে।