ব্রিকসের সদস্যদেশের নেতারা। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে | ছবি: রয়টার্স

রয়টার্স, জোহানেসবার্গ: বিকাশমান পাঁচ অর্থনীতির দেশের জোট ব্রিকসের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর চুক্তি নিয়ে গতকাল বুধবার আলোচনার এক পর্যায়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য ছয়টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানোর ঘোষণা দিয়েছে জোটটি।

আমন্ত্রণ পাওয়া দেশ ছয়টি হলো আর্জেন্টিনা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ব্রিকসে দেশ ছয়টির সদস্যপদ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি কার্যকর হবে বলে আজ জানানো হয়।

ব্রিকসের বর্তমান সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। গত মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়। আজ এই সম্মেলনের শেষ দিন।

পাঁচ সদস্য ছাড়াও এই জোটে যুক্ত হতে আগ্রহী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা জোহানেসবার্গ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ৪০টির বেশি দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে ২২টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার কথা বলেছে।

এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের শুরু থেকেই মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে জোটের সম্প্রসারণ। ব্রিকসের সব সদস্যই প্রকাশ্যে এই জোটের সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়। তবে কীভাবে, কতটা, কত দ্রুত জোটের সম্প্রসারণ হবে—এসব বিষয় নিয়ে ব্রিকস নেতাদের মধ্যে বিভক্তি লক্ষ করা যায়।

বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার চাওয়া হলো, যত দ্রুত সম্ভব এই জোটে সদস্যদেশের সংখ্যা বাড়ানো হোক। তারা ব্রিকসকে পশ্চিমা আধিপত্যের বিপরীতে একটি কার্যকর বিকল্প জোট হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষে।

এবারের শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি প্যান্ডর গতকাল বুধবার বলেন, নতুন সদস্য নেওয়ার জন্য একটি পদ্ধতির বিষয়ে ব্রিকস নেতারা একমত হয়েছেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত রেডিও স্টেশনকে নালেদি বলেন, ‘আমরা (ব্রিকসের) সম্প্রসারণের বিষয়ে একমত হয়েছি।’

নালেদি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি নথি রয়েছে, যা আমরা গ্রহণ করেছি। এতে ব্রিকসের সদস্য হতে চায়, এমন দেশগুলোকে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নির্দেশিকা, নীতিমালা ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা আছে।...বিষয়টি খুবই ইতিবাচক।’
ব্রিকসের সম্প্রসারণের বিষয়ে গতকালই একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পর একটি চুক্তি গৃহীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তি গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

জোটের সম্প্রসারণ-সংক্রান্ত আলোচনা সম্পর্কে অবগত এক ভারতীয় কর্মকর্তা চুক্তি গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি গতকাল রাতে রয়টার্সকে বলেছিলেন, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

সূত্র জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই জোটে সদস্য নেওয়ার বিষয়ে নতুন মানদণ্ড সামনে আনলে চুক্তি গৃহীত হওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে যায়। ফলে বৈশ্বিক বিষয়ে কথিত তৃতীয় বিশ্ব তথা গ্লোবাল সাউথকে আরও শক্তিশালী করতে ব্রিকসের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার খবর দেয় রয়টার্স।

ব্রিকস দেশগুলোর অর্থনীতির মাত্রা-প্রকৃতি অনেকটাই ভিন্ন। জোটের সদস্য সরকারগুলোর বিদেশনীতির লক্ষ্যও পরস্পর থেকে ভিন্ন। কোনো ইস্যুতে ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো জোটের জন্য জটিল কারণ হিসেবে কাজ করে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জোটের প্রভাবশালী সদস্য চীন। তারা পশ্চিমা আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য একটি বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার উপায় হিসেবে ব্রিকস সম্প্রসারণের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছে।

গতকাল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছিলেন, অস্থিরতা ও রূপান্তরের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বিশ্ব। ঐক্যের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিশালী করার বিষয়ে জোটের প্রতিষ্ঠাকালীন উদ্দেশ্যের কথা ব্রিকস দেশগুলোর সব সময় মনে রাখা দরকার।

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ কারণে তিনি এই শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিচ্ছেন। তিনি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে এই বিষয়টি দেখাতে আগ্রহী যে এখনো বিশ্বে তাঁর বন্ধু রয়েছে।

অন্যদিকে ব্রাজিল ও ভারত উভয়ই পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা গত মঙ্গলবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ধনী অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায় না ব্রিকস।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত মঙ্গলবার বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্রিকস দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা রয়েছে। এ কারণে জোটটি যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন না তিনি।

তবে জোটের সম্প্রসারণসহ বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত বহুপক্ষীয় ঋণদাতাদের বিকল্প হিসেবে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (ব্রিকস ব্যাংক) এগিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ পশ্চিমের কিছু লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।