কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। সোমবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি কক্সবাজার: কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। সোমবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। পরিদর্শনকালে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমও ঘুরে দেখেন তাঁরা।

আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ছয় বছর আগে তাঁদের ওপর সংঘটিত নির্যাতন-নিপীড়নের কথা প্রতিনিধিদলকে তুলে ধরেন। এ সময় নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা।

 প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মার্কিন কংগ্রেসের দুজন সদস্য। তাঁরা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য এড কেইস ও রিপাবলিকান পার্টির রিচার্ড ম্যাকরমিক।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয় সূত্র জানায়,  দুই কংগ্রেস সদস্যদের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি সকালে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের আর্থিক অবস্থা, জীবনমানসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করে। বিকেলে আরআরআরসির কার্যালয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে আশ্রয়শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অর্থসহায়তা কমানোর ফলে রোহিঙ্গাদের অবস্থা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে আলাপ করেন।

অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ‘আমি মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলেছি, আশ্রয়শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা সব সময় থাকে। অর্থসহায়তা কমে যাওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের জীবনমানে প্রভাব পড়েছে, দুর্ভোগ বেড়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নির্বিঘ্ন, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই করতে বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টার শেষ নেই। যুক্তরাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে সহায়তা করতে হবে।’

সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এরপর সমুদ্রসৈকতের কাছে অবস্থিত ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) কার্যালয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইওএম, বিশ্বখাদ্য সংস্থা-ডব্লিউএফপিসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে সড়কপথে প্রতিনিধিদল উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে যায়।

আরআরআরসি কার্যালয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যান উখিয়ার বালুখালী (ক্যাম্প-১২) আশ্রয়শিবিরের রেজিস্ট্রেশন সেন্টারে। এরপর ক্যাম্প-১১-এর লার্নিং সেন্টার, ক্যাম্প-১১-এর জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত ই-ভাউচার সেন্টার, আইওএম-এর  ফায়ার রেসপন্স সাইট ও কুতুপালং রেজিস্ট্রেশন ক্যাম্পের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করে।  

রোহিঙ্গা নেতা জালাল আহমদ বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদল রোহিঙ্গা নেতাদের কাছে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা, জীবনযাপন, প্রত্যাবাসন, মিয়ানমার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। জবাবে একজন রোহিঙ্গা বলেছেন, আগে পরিবারপ্রতি ১০ মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়া হতো। এখন ৮ ডলার দেওয়া হচ্ছে। তাতে কষ্ট ও দুর্ভোগ বেড়েছে। আরেকজন রোহিঙ্গা বলেন, আশ্রয়শিবিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই খারাপ, প্রায় সময় খুনখারাবি লেগে থাকে। মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা চলে। মানব পাচার, ধর্ষণ, অপহরণ লেগেই আছে।

জালাল আহমদ আরও বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়, ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশও নেই। এখন চীনের মধ্যস্থতায় প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা চললেও রোহিঙ্গারা চায় নিরাপদ, টেকসই, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন। সে ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায়।

বেলা তিনটার দিকে আশ্রয়শিবির থেকে কক্সবাজার শহরের দিকে রওনা দেয় মার্কিন প্রতিনিধিদল। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে (আরআরআরসি) রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন তাঁরা। পরে উড়োজাহাজে ঢাকায় ফিরে যায় মার্কিন প্রতিনিধিদল।