পদক্ষেপ নিলেই পাবেন সাদাসিধা জীবন

কৃত্রিমতায় পূর্ণ জীবনের পথে ছুটতে গিয়ে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা প্রায়ই হাঁপিয়ে উঠি। এই সবকিছু এড়িয়ে সাদাসিধা জীবনযাপনের জন্য নিতে হবে পাঁচটি পদক্ষেপ। লিখেছেন হিমু হোসাইন

মডেল: চন্দ্রিমা হালদার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জীবন আজকাল কেমন যেন কৃত্রিম জাঁকজমকে ভরা। এই অর্থ, সমৃদ্ধি আর সাফল্যের পেছনে ছুটে চলতে চলতে আমরা হাঁপিয়ে উঠি প্রায়ই। আর তখনই আকাঙ্ক্ষা জাগে একটু শান্তিময়, সাদাসিধা জীবনযাপনের। সাদাসিধা জীবন বলতে আসলে বোঝায়, যখন জীবনে শুধু প্রয়োজনীয় সব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

আমরা ভুলে যাই জীবনের সব আনন্দ সাধারণ কিছু বিষয়ের মধ্যেই মডেল: চন্দ্রিমা হালদার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অর্থাৎ, জীবনে যা কিছু অতিরিক্ত আর অপ্রয়োজনীয়, তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। সেটা হতে পারে মানুষ, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া, কাজ ইত্যাদি। আমরা আসলে জীবনে এমন অনেক কিছু আঁকড়ে ধরে থাকি, যা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ তো নয়ই; বরং আমাদের জন্য একধরনের বোঝায় পরিণত হয়। এসব বোঝা থেকে মুক্তি দেবে সাদাসিধা জীবন।

কেন বেছে নেবেন সাধারণ জীবনযাপন
সহজ আর সাধারণ জীবন যাপন করতে গেলেই দেখতে পাবেন, জীবনের সব আনন্দ সাধারণ কিছু বিষয়ের মধ্যেই। যখনই মানুষ অতিরিক্ত কোনো কিছুর পেছনে দৌড়াতে থাকে, জীবন হয়ে যায় রেসের মতো। যেখানে থাকে শুধুই ছুটে চলা। একটুখানি বিশ্রামের কোনো সময় কিংবা সুযোগ নেই। তাহলে জীবন উপভোগ করবেন কীভাবে!

অল্প কিছু জিনিস নিয়ে বেঁচে থাকা আপনাকে অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি দেবে।

জীবনকে উপভোগ করার অবকাশ বের করতে হবে। মডেল: চন্দ্রিমা হালদার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জীবনকে উপভোগ করার মাঝে মিলবে একটুখানি বিশ্রাম। দিন শেষে আরামের ঘুম উপহার দেবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এটি আপনার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করবে। সাধারণ জীবনযাপন যে শুধু আপনার উপকার করবে তা নয়, আপনার এই সামান্য উদ্যোগ হবে পুরো পৃথিবীর জন্য কল্যাণকর। কারণ, আপনি যখন সাধারণ জীবন যাপন করবেন, তখন টেকসই আর পরিবেশবান্ধব জিনিসগুলোকেই বেছে নেবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সহজ এবং সাধারণ জীবন যাপন করতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি আমরা।

বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন

আপনি যদি সাধারণ জীবনযাপনের দিকে এগোতে চান, তবে সবার আগে বাসার অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন। এসব আপনার বাসার অনেক জায়গা দখল তো করেই, সেই সঙ্গে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আসবাব, কাপড়, রান্নাঘরের সামগ্রী, বই-খাতা, যা আপনার আর কোনো কাজে লাগছে না, তা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারেন। অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জিনিস আপনার বাসার পরিবেশকে অস্বস্তিকর করে তোলে। তাই এসব সরিয়ে ফেলে বাসাকে সুন্দর ও সাদামাটাভাবে সাজান।

অতিরিক্ত কেনাকাটা কমিয়ে দিন

প্রয়োজন ছাড়া কোনো কিছু কিনবেন না। অনেক সময় আমরা কোনো কিছু হঠাৎ ভালো লাগলেই কিনে ফেলি। পরবর্তী সময় দেখা যায় কিনে ফেলার পর তা আর ভালো লাগছে না। তাই কোনো কিছু কেনার আগে সময় নিন। এরপরও যদি মনে হয়, এটি আপনার কেনা উচিত, তবেই কিনুন। নাহলে নয়। এটি যে শুধু আপনাকে একগাদা অপ্রয়োজনীয় জিনিস থেকে রক্ষা করবে তা-ই নয়, সেই সঙ্গে আপনার অর্থ সাশ্রয়েও সহায়তা করবে।

নিজেকে যথাসম্ভব ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন

ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইলে প্রকৃতিই হতে পারে সেরা আশ্রয় মডেল: চন্দ্রিমা হালদার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ইত্যাদি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। এসব আমাদের জীবন থেকে চাইলেও একেবারে দূর করে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই চেষ্টা করুন যথাসম্ভব এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখার। সব সময় ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকলে চিন্তা করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে

সাধারণ ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন 

চেষ্টা করুন সাধারণ ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করার। প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। নিজে রান্না করার চেষ্টা করুন। ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রাকৃতিক ও ঘরে তৈরি খাবারের কোনো তুলনা নেই।

একসঙ্গে অনেকগুলো কাজ করা থেকে বিরত থাকুন 

আমরা অনেক চাপের মধ্যে থাকি। কারণ, আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করতে চাই। এটি আমাদের মধ্যে একধরনের অস্থিরতাও সৃষ্টি করে। তাই চেষ্টা করুন যে সময়ে যা করছেন, শুধু সেখানেই মনোযোগ দেওয়ার। বন্ধুদের সঙ্গে যখন ঘুরতে যাবেন, তখন শুধু তাদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোই উপভোগ করুন। এই সময় অন্য কোনো কাজ রাখবেন না। আবার যখন কোনো কাজ করবেন, তখন অহেতুক বন্ধুদের সঙ্গে কথোপকথন করে বা ইন্টারনেট ব্রাউজ করে সময় নষ্ট করবেন না।