সাঈদীর মৃত্যু: শাহবাগে জড়ো হয়ে জামায়াতের নেতা–কর্মীদের স্লোগান

রাজধানীর শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের সড়কে জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীদের অবস্থান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর খবরে শাহবাগ এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীরা জড়ো হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে কয়েক শ নেতা–কর্মী শাহবাগ মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (সাবেক শেরাটন হোটেল) মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে আছেন।

নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। তাঁদের অবস্থানের কারণে সড়কের এক পাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীদের এই অবস্থান ঘিরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু হয়।

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে গত রোববার বিকেলে কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওই রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজধানীর বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ছিলেন। তিনি জামায়াতের রাজনীতির পাশাপাশি ওয়াজ করা বা ধর্মীয় বক্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ঢাকায় তাঁর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। সেই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতা চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় সহিংসতায় অনেক মানুষ হতাহত হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। তাঁর আপিলের ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেন ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। সেই রায়ে সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আপিল বিভাগের রায়ও পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। কিন্তু সেই আবেদনে আপিল বিভাগের আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়ে কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেই থেকে তাঁকে গাজীপুরে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে জামায়াতে ইসলামী শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সালে জামায়াতের রুকন (দলটির পূর্ণাঙ্গ সদস্য) হন। ১৯৮৯ সালে তিনি জামায়াতের মজলিশে শুরা সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাঈদী ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতের নায়েবে আমিরের পদে রয়েছেন।