কক্সবাজারে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা ঘিরে সংঘর্ষে জামায়াতের কর্মী নিহত

ভাঙচুর করা পুলিশের গাড়ি। মঙ্গলবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি চকরিয়া: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে চকরিয়া পৌরসভার নামারচিরিঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম মো. ফোরকানুর রহমান (৫০)। তিনি চকরিয়া পৌরসভার আবদুল বারী পাড়ার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে। জামায়াতে ইসলামীর দাবি, ওই ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, চকরিয়ায় জানাজা নিয়ে সংঘটিত ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। পুলিশের পক্ষ থেকে গুলিবর্ষণ করা হয়নি। সংঘর্ষের ঘটনায় কতজন হতাহত হয়েছেন, বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ জন্য চকরিয়ায় তিনবার গায়েবানা জানাজার স্থান বদল করা হয়। সর্বশেষ চকরিয়া পৌরসভার নামারচিরিঙ্গা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজার-সংলগ্ন জায়গায় জানাজার নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, গায়েবানা জানাজা পড়তে বিকেল চারটার দিকে মানুষ মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। স্থানসংকুলানের কারণে সেখানে আগেই আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনেকে নতুন করে জানাজা পড়তে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে জানাজা পড়ে ফেরত আসছিলেন। ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত। ওই সড়ক দিয়ে তাঁদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন তাঁরা। এ সময় উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে ২০ থেকে ৩০ জন মুখোশ পরা ব্যক্তি ও অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। এতে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে একজন নিহত ও ছয় থেকে সাতজন আহত হন।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা সৈয়দ ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আনার আগে ওই ব্যক্তি মারা যান। দেখে মনে হয়েছে, তাঁর মাথার পেছনে ছররা গুলির আঘাত লেগেছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়।

চকরিয়ায় সংঘর্ষের পর পুলিশের অবস্থান। মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার সোসাইটি এলাকায়

ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তিনিসহ পুলিশের ছয়জন সদস্য আহত হয়েছেন। মূলত দুই পক্ষের মধ্যে ঘটনা ঘটেছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে কোনটা কাদের পক্ষ, তা নিশ্চিত নন তিনি।

কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, পুলিশের গুলিতে জামায়াতের কর্মী ফোরকানুর রহমান নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, গায়েবানা জানাজা পড়তে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাঁরা জোর করে জানাজা পড়েছেন। মিছিল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেছেন, গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।