বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রক্তদহ বিলের শাখাখালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প সড়ক তলিয়ে গেছে। লোকজন ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে খাল পারাপার হচ্ছেন। শুক্রবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি আদমদীঘি: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার রক্তদহ বিলের শাখা খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতুর বিকল্প সড়ক বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এ অবস্থায় ১২ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। তাঁরা ১০ কিলোমিটার ঘুরে সান্তাহার চলাচল করছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, সেতুর ঠিকাদার একটি বাঁশের সাঁকো করে দিয়েছিল। মজবুত করে তৈরি না করায় সে সাঁকোও ভেঙে পড়েছে। তবুও সময় বাঁচাতে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সে সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন।

গত শুক্রবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সংযোগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির স্রোত বইছে চারদিকে। পাশেই বাঁশের তৈরি সাঁকো, এর মাঝের অংশ ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যেও দু-একজন সাঁকো ধরে পার হওয়ার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, সান্তাহার সাইলো সড়ক ভায়া কদমা-আদমদীঘি রেলওয়ে স্টেশন সড়ক দিয়ে সদর ও সান্তাহার ইউনিয়নের লোকজন চলাচল করেন। সেতুর পশ্চিম পাশে সান্তাহার ইউনিয়ন ও পূর্ব পাশে আদমদীঘি সদর ইউনিয়ন। বিকল্প সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক দিয়ে সরাসরি যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খালের পূর্ব পারের কদমা, করজবাড়ী, গণিপুর, রামপুরা, ময়ূর কাশিমালা, জোড় পুকুরিয়া, মণ্ডবপুরসহ ১২ গ্রামের প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। এখন তাঁরা অতিরিক্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে সান্তাহার শহরে যাচ্ছেন।

গণিপুর গ্রামের শিক্ষক নুর ইসলাম বলেন, নানা কারণে প্রতিদিন এই এলাকার অনেক মানুষকে সান্তাহার শহরে যেতে হয়। বিকল্প সেতু ভেসে যাওয়ায় তাঁদের ওই পথে যাতায়াত একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন প্রায় দশ কিলোমিটার ঘুরে আদমদীঘি হয়ে তাঁরা সান্তাহার শহরে যাচ্ছেন। তিনি বিকল্প সেতুটি পুনরায় নির্মাণের দাবি জানান।

করজবাড়ী গ্রামের আবদুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক মানুষ দিনমজুরি কাজের জন্য সান্তাহার শহরে যান। সেতু ভেসে যাওয়ায় তাঁরা সাঁতার কেটে খাল পার হচ্ছেন।’

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, রক্তদহ বিলের শাখা খালের ওপর ২০০৬ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৬০ দশমিক ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর সেই সেতুর পাটাতন খুলে যায়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সেতুর স্থানে উন্নতমানের আরসিসি সেতুর (ঢালাই সেতু) কাজ শুরু করা হয়। কাজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুন মাসে।

সেতু নির্মাণের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খালের ওপর একটি অস্থায়ী কাঠের সেতু ও দুই পাশে ইট ফেলে একটি সড়ক নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও প্রবল স্রোতের কারণে বিকল্প সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায় আর ভেসে যায় অস্থায়ী কাঠের সেতু। এর ফলে ওই সড়কে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দমদমা গ্রামের বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ১৫–২০ দিন হলো এখানে অচলাবস্থা চলছে। অথচ ঠিকাদার অথবা সওজের কাউকে এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। বিষয়টি দুঃখজনক।’

বগুড়া সওজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড সেতুর কাজটি করছে। এর খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাত কেটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রচণ্ড স্রোতের কারণে সেতুর কাজে দেরি হচ্ছে। আর যে সাঁকো করা হয়েছে, সেটিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বগুড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান জানান, নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দ্রুত করার চেষ্টা করা হবে। বর্ষা মৌসুমের প্রবল স্রোতে সেখানে তৈরি বিকল্প সড়কটি ভেঙে গেছে। খালের ওই স্থানে নৌকা দেওয়া হবে। পানির স্রোত না কমা পর্যন্ত সেখানে নৌকা চলাচল অব্যাহত থাকবে। নৌকা পারাপারের খরচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে।