প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক-শিক্ষার্থী। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
মানববন্ধনে বক্তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সব কারাবন্দীর মুক্তি, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের দাবি জানান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আবদুল মজিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শৌভিক রেজা, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী, সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান প্রমুখ।
বর্তমানে সরকার ও বিচারব্যবস্থা সব একাকার হয়ে গেছে মন্তব্য করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের দেশের কোটি কোটি টাকা যাঁরা পাচার করছেন, তাঁদের বিষয়ে নাকি আর তদন্ত করা যাবে না, এমন একটি আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। আমি বিস্মিত ও হতভম্ব। তাহলে এখানে রাষ্ট্রের প্রাধান্যটা কোথায় থাকল? আজকে সরকার ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। একজন খাদিজা রাষ্ট্রের জন্য এত বড় হুমকি হতে পারে না।’
বর্তমান সরকার কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারে না মন্তব্য করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, তারা অত্যন্ত ভীরু ও দুর্বল। যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের রুখতে রাষ্ট্রের সব যন্ত্র ব্যবহার করছেন। রাষ্ট্র টিকে থাকবে, কিন্তু ক্ষমতা টিকে থাকবে না। অবিলম্বে খাদিজাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌভিক রেজা বলেন, ‘আমি শুধু খাদিজার জন্য এখানে আসিনি। বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীর যেন এই অবস্থা না হয়, সে জন্য এসেছি। একটা মানুষ যখন গুম হচ্ছে, তখন কিন্তু আমরাও গুম হচ্ছি। এই সরকার দুর্বল নয়। এই সরকার দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। তারা কালো শক্তি দিয়ে টিকে আছে। আমাদের এই উপস্থিতি বলে দিচ্ছে এই সরকার কতটা শক্তিশালী।’
বিগত দুটি নির্বাচন, দেশের চলমান উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস, বিদেশে লাখোকোটি টাকা পাচারের বিষয়ে যদি কথা বলতে না পারা যায়, তবে স্বাধীনতার অর্থ কী—প্রশ্ন তোলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা যেটুকু বলছি, তার চেয়ে আরও বেশি বলা দরকার। ক্ষমতাসীনদের নোংরামি নিয়ে কেউ যাতে কথা বলতে না পারে, সেই লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। বর্তমানে আবার সেটি বাতিল করে নাম রাখা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ যেন নতুন বোতলে পুরাতন মদ রাখার মতো। যে রাষ্ট্রে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত, সেটি আর যাই হোক সভ্য রাষ্ট্র বলা যায় না।’