বঙ্গবন্ধুর পথে নেই বাংলাদেশ, পথ হারিয়েছে: অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন

‘গণতান্ত্রিক মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু : বাংলাদেশ ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। জাতীয় প্রেসক্লাবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিশেষ প্রতিবেদক: ইতিহাসের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর পথে নেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

‘গণতান্ত্রিক মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন।

সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন ‘আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। জনগণ যেন ভোট দিতে পারে। জনগণ ভোট থেকে বিমুখ হয়ে গেছে। প্রতিটি উপনির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি আমাকে বেদনা জাগায়। সে জন্য আমরা চাই, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ফিরে আসুক। বাঙালি এবং বাংলার প্রকৃতির সমন্বিত প্রতিরূপ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। আজকে বাংলাদেশ সেই পথে নেই।’

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন একজনও যদি থাকে যিনি বিরোধী চিন্তা করেন, তার কথা শুনতে হবে। কিন্তু আজকে সেই বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, জেলহাজতে পাঠানো হচ্ছে এবং জেলহাজতে মানুষ মারাও যাচ্ছেন। এই আইনের প্রধান শিকার হয়েছেন সাংবাদিকেরা। এখন ‌‘পুরোনো মদ নতুন বোতলে’ ঢালার নামে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন ‘আমরা বলেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে, অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে গণতান্ত্রিক একটি আইন করতে হবে। কিন্তু  ঠিক সেই দিকে নজর আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা যাওয়ার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, একটি ধর্মান্ত শক্তির আস্ফালন অবলোকন করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ করে তাঁদের মধ্যেও ৭০ জনকে পাওয়া গেছে, যাঁরা সাঈদীর পক্ষে সমব্যথী হয়েছেন। বাংলাদেশের সমাজ-রাষ্ট্রে সর্বত্র ধর্মান্ধতার জায়গা নিবিড় হচ্ছে, গাঢ় হচ্ছে।

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মোটাদাগে তিন ধরনের আলোচনা আছে বলে উল্লেখ করেন রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, প্রথমত কেউ কেউ মনে করছেন বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আওয়ামী লীগ গত দুই মেয়াদে যেভাবে নির্বাচন করে গেছে, সেভাবেই তারা নির্বাচন করে যাবে। বিএনপি আসলে আসবে, না আসলে না আসবে। তারা তাদের মতো করে নির্বাচন করে যাবে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি শেষ মুহূর্তে ফয়সালা করবে। শেষ সময়ে সমঝোতার জায়গায় যেতে পারে। তৃতীয়ত, বিএনপি তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে। বিএনপি-জামায়াত মিলে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এই সরকারকে ফেলে দিতে সক্ষম হবে কি না, তখন ওয়ান–ইলেভেনের মতো আরেকটি সরকার আসবে কি না, তারা নির্বাচনের আয়োজন করবে কি না—এ রকম নানা মডেল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা রয়ে গেছে।

আলোচনা সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করেন। একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। নড়বড়ে নয়, বরং কঠিনভাবেই তিনি বিশ্বাস করতেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিকে আঘাত করা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের পথকে প্রশস্ত করে না।

জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও বর্তমান বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক মুক্তির বিষয়টি কেন প্রাসঙ্গিক? আমাদের গণতান্ত্রিক মুক্তি কি হয়েছে? হয়তো এই প্রশ্নের উত্তরা আমরা সবাই কমবেশি জানি। আমরা এটাও জানি যে শুধু গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ১৬৯ আসনের মধ্যে বাংলায় ১৬৭ আসন জিতে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পাঁচ বছরের ম্যান্ডেট থাকার পরেও স্বাধীনতার পর নির্বাচন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু এই সময় দাঁড়িয়ে আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এবারের নির্বাচন কি জনগণের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন হবে? নাকি বিগত দুটি নির্বাচনের মতোই হবে? আমাদের মনে রাখতে হবে, চাপহীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। এই অধিকারটি ক্ষুণ্ন হলে সামগ্রিক মুক্তি মেলা প্রায় অসম্ভব হয়ে  পড়বে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আর এম দেবনাথ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, যুগ্ম সম্পাদক এ কে আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, শ্রমিক নেতা এম এ ওয়াহিদ, হারুন উর রশিদ ভূঁইয়া, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। আলোচনা সভার শুরুতে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন শাহীন আক্তার।