হাটে পাটের কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা। সম্প্রতি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চত্বরহাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি বেড়া: পাট চাষে গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে কৃষকের। মজুরির ব্যয়ও বেড়েছে। সঙ্গে সার, কীটনাশক, বীজসহ চাষাবাদের খরচও বাড়তি। সব মিলিয়ে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে গড়ে ৫০০ টাকা। কিন্তু বাজারে পাটের দাম পড়তির দিকে। পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাটের দাম প্রতি মণে গড়ে ৬০০ টাকা কমেছে। এতে লোকসানে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষকেরা বলছেন, গত বছর প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে বাজারে ওঠা নতুন পাট ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে পাটের দাম কমছে। সোমবার পাটের দাম কমতে কমতে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় তাঁদের উৎপাদন খরচ তুলতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, তাঁদের কাছে এখনো গত বছরের পাট রয়েছে। এ জন্য তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন কম। এ ছাড়া বাজারে পাটের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে।
কৃষক ও উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সাঁথিয়ায় ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর এবং বেড়ায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পাট চাষের সময় নানা বিড়ম্বনার শিকার হন চাষিরা। প্রথমত, আবাদের সময় খরা থাকায় পাটগাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে পাট কাটার সময় পানির অভাবে অনেক কৃষককে পাট জাগ দিতে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে যেতে হয়েছে। এ জন্য প্রতি বিঘায় তাঁদের অতিরিক্ত চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। এর বাইরে শ্রমিকের মজুরি বাড়া, বীজ, কীটনাশক, সারের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে গতবারের তুলনায় এবার প্রতি বিঘায় অন্তত পাঁচ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে কৃষকদের।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে গিয়ে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০০ টাকার বেশি। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। এ সময় কৃষকেরা মোটামুটি লাভে ছিলেন। কিন্তু এখন নিম্নমানের পাটের দাম ১ হাজার ৮০০, মধ্যম মানের পাট ২ হাজার ও ভালো পাট ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নিম্ন ও মধ্যম মানের পাট বেশি হওয়ায় প্রতি মণ পাটে গড়ে ৩০০ টাকা লোকসান হচ্ছে চাষিদের।
সোমবার সাঁথিয়ার করমজা চতুর হাটে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর পাট। বেশির ভাগ পাট গড়ে দুই হাজার টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো চাষিকে পাট বিক্রি না করে বিষণ্ন মনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
ভ্যানে ৯ মণ পাট নিয়ে হাটে এসেছিলেন বেড়া উপজেলার চাকলা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার পাটের মান ভালো। অথচ ব্যাপারীরা প্রতি মণ ২ হাজার ১০০ টাকার বেশি বলতেছে না। এই দামে পাট বেচলি লোকসান হয়া যাবি।’
খাকছাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এবার পাটের আবাদে খরচ বাড়িছে। অথচ দাম পাতেছি না। এরম হলি সামনে আর পাটের আবাদ করব কি না, সন্দেহ।’
হাটে পাট কিনছিলেন বেড়ার অন্যতম পাট ব্যবসায়ী মানিক মিয়া। তিনি বলেন, ‘আজ এখন পর্যন্ত ২০০ মণ পাট কিনছি। কিন্তু পাটের বাজার নিয়ে আমরাও কিছুটা সংশয়ে আছি।’
পাটের দাম কমার বিষয়ে ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, বেড়া-সাঁথিয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে এখনো গত বছরের পাট থেকে গেছে। এর মধ্যে শুধু বেড়ার ব্যবসায়ীদের কাছে গত বছরের অন্তত ১০ হাজার মণ পাট আছে। এতে ব্যবসায়ীরা পাট কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন কম। তা ছাড়া দু-তিন সপ্তাহ আগে বাজারে পাটের সরবরাহ কম ছিল। তাই পাটের দাম কিছুটা বেশি ছিল। এখন বাজারে পাটের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে।