অভিনেত্রী চমক | ছবি: ফেসবুক

বিনোদন প্রতিবেদক: ছোট পর্দার অভিনেত্রী রুকাইয়া জাহান চমকের বিরুদ্ধে শুটিংয়ে অসদাচরণ অভিযোগ এনে টেলিভিশন নাট্যপরিচালকদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডে অভিযোগ করেছেন নির্মাতা আদিব হাসান। তাঁর দাবি শুটিংয়ে সময়মতো না আসা এবং এসে একটি দৃশ্য করে শুটিং ফেলে চলে যাওয়ায় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

একপর্যায়ে পরিচালক অভিনেত্রী চমকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তাঁকে শুটিং স্পট থেকে বের হতে বাধা দেন পরিচালক। অভিনেত্রী শুটিংয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় অভিনয় শিল্পী সংঘ ও পুলিশের কাছে সহযোগিতা চান। পরে শুটিং সেটে এসেছিল পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ঘটনার মিটমাটের আশ্বাস হলেও পরে আর শুটিং হয়নি। এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয় তোলপাড়।

চার দিন আগের সেই ঘটনা নিয়ে পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীরা তাঁদের অভিভাবক সংগঠনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। এখন এ ঘটনা নিয়ে পরিচালক অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। 

অভিনেত্রী চমক | ছবি: ফেসবুক

৪ আগস্ট ঘটনার দিন কী ঘটেছিল, সেটা নিয়ে সবাই একত্রে বসবেন। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার আগে কেউই কোনো বক্তব্য দিতে চান না। অভিনেতা মাসুম বাশার শুটিংয়ের দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন অভিনেত্রী চমক। ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসুম বাশার বলেন, ‘ঘটনা নিয়ে অভিনয় শিল্পী সংঘে অভিযোগ করেছি। তারাই দেখছে বিষয়টা। কোনো সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে তারা এই নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।’ ডিরেক্টর গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে সাংগঠনিকভাবে জানাব।’ ‘শ্বশুরবাড়িতে প্রথম দিন’ নামের সেই নাটকের পরিচালক আদিব হাসান ফোন ধরেননি।

এ ঘটনা নিয়ে আমরা কথা বলেছি অভিনেত্রী চমকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আমাদের অভিনয় শিল্পী সংঘে অভিযোগ দিয়েছি। এখনো কোনো বিচার পাইনি। সেখান থেকে আমাকেও কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমি ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি।’ তাঁর ভাষায়, ‘যখন কোনো উঠতি নায়িকা ভালো করতে থাকে, আশপাশের কারও কোনো চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তখন তাঁর বিরুদ্ধে কিছু লোক লেগে যায়। এটা সব দেশেই যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে, এটা স্বাভাবিক, উঠতি নায়িকা আশপাশের কারও চাহিদা পূরণ না করলে তার পেছনে কেউ লাগবেই । আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে অনেক বড় ষড়যন্ত্র হচ্ছে!’

কথা বলতে বলতে কাঁদতে থাকেন চমক। তিনি বলেন, ‘আরশ আমার ভালো বন্ধু ছিল। একসঙ্গে কাজ করছিলাম। আমাদের ভালো জুটি হতে যাচ্ছিলাম। একটা সময় সে বন্ধুত্বের চেয়ে বেশি কিছু আশা করে। আমি এমনটা কখনোই তাঁর কাছে আশা করিনি। যে কারণে ষড়যন্ত্র করছে। আর আমি নাকি আমাদের সিনিয়র অভিনেতা মাসুম বাশার আংকেলকে ধমক দিয়েছি, পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছি। তাহলে পুলিশ যখন এল, তখন পুলিশকে কেন বললেন না, তাঁর সঙ্গে আমি এমন আচরণ করেছি। মূল কথা এটা আমার বিরুদ্ধে তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। আমি মোশাররফ করিম ভাই, অপূর্ব ভাই, চঞ্চল ভাইদের সঙ্গে কাজ করছি। যে কারণে কেউ হয়তো আমার ভালো ক্যারিয়ার মেনে নিতে পারছে না। হয়তো সে চাচ্ছে আমরা পার্টনার হই, বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু হয়ে অভিনয় করি। না করার জন্যই ষড়যন্ত্র। সাড়া দেওয়ায় তাদের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’

এই সময় ঘটনা প্রসঙ্গে চমক আরও বলেন, ‘তাঁরা বলছেন আমাকে নাকি প্রোডাকশন বয় “চমৎকার” বলায় আমি রেগে গেছি। এটা অযৌক্তিক। সেদিন সকালে আমাকে আরশ খান ফোন দিয়েছে। আমি তাঁর ফোন ধরিনি। পরে মেকআপ রুমে এসে আমাকে বলে, “তোমাকে ফোন দিলাম ধরলে না...” তখন আমি বলি, আমাকে কল টাইম দেওয়ার দায়িত্ব সহকারী পরিচালকের‍। তুমি আমাকে কো–অর্ডিনেশন করতে পারো না। এটা বলায় সে ক্ষেপে গিয়েছে। সে আমাকে বলে “তুমি বেয়াদবি করলা আমার সঙ্গে।” আমি বলি, কী বেয়াদবি করলাম? তার সবকিছু মাথায় উঠে গেছে।’

এই নিয়ে দুজনের কথা–কাটাকাটি হওয়ায় বিষয়টি শুটিংয়ের পরিবেশে প্রভাব ফেলে। বিষয়টি নিয়ে চর্চা হয়।

অভিনেত্রী চমক বলেন, ‘ডিরেক্টর একদম নতুন। সে আবার আরশের ঘনিষ্ঠ। আরশ তাকে সামনে আনার চেষ্টা করছে। আরশ বিষয়টি ম্যানুপুলেট করে, পরিচালককে বলে সিনক্রিয়েট শুরু করে। পরিচালক আরশের পক্ষ নেয়। পরে দেখি সবাই পরিচালকের পক্ষে কথা বলছে। তখন আমি বলি শুটিং করব না, চলে যাব। এ কথা শুনে পরিচালক বলতে থাকেন তার এলাকা উত্তরা। এখান থেকে এক পা নড়তে হলে আমাকে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। আমাকে আটকে রাখার চেষ্টা করা হয়। তখন আমি বাধ্য হয়ে আমাদের অ্যাক্টর ইকুইটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতা চাই, আমি নিরাপত্তা বোধ না করায় ঘটনা পুলিশকে জানাই। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ আসে। এর মধ্যে আবার পরিচালক আরশের কথা মতো অসুস্থ হওয়ার নাটক শুরু করে। তখন মাসুম বাশার আংকেল এসে বলেন, ‘আমার জন্য পরিচালক অসুস্থ হয়ে গেল... এই নিয়ে আংকেলের সঙ্গে আমার কথা–কাটাকাটি হয়। কিন্তু ঘটনার দিন আংকেল কিন্তু ডিরেক্টরস গিল্ডকে কিছু বলেননি। এখন সবাই বলছেন। আমি নিশ্চিত পরিকল্পনা করে আরশ আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’