প্রতীকী ছবি |
মহিউদ্দিন, ঢাকা: টাকার অভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাসের বাড়তি দাম দিতে পারছে না সরকারি সার কারখানা। বাড়তি দাম দিলে প্রতি টনে তাদের লোকসান হবে ১০ হাজার টাকা। অথচ আমদানি করা সারে টনপ্রতি এখন লোকসান হচ্ছে ৩৫ হাজার টাকা। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারও খরচ হচ্ছে সরকারের। আমদানি ঘাটতি মেটাতে ভর্তুকি দিলেও উৎপাদন ঘাটতির ভর্তুকি দিচ্ছে না সরকার।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র বলছে, গত এপ্রিল পর্যন্ত সার কারখানায় গ্যাস বিল বকেয়া জমেছে ১ হাজার ২১১ কোটি টাকা। এরপর আরও তিন মাস পেরিয়ে গেছে। বিল আদায়ের জটিলতা কাটাতে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত গেছে। বর্ধিত দামেই গ্যাস বিল আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর গত জুনে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
গণশুনানির মাধ্যমে গত বছরের জুনে সব ধরনের গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ায় জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ সময় সবচেয়ে বেশি—প্রায় ২৬০ শতাংশ বাড়ানো হয় সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। তবে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও বাড়তি দাম দিচ্ছে না সরকারি সার কারখানা।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে চারটি ইউরিয়া সারকারখানা সচল আছে। এর মধ্যে যমুনা ও শাহজালাল সার কারখানায় বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে। আর গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা ও আশুগঞ্জ সার কারখানা দুটি বন্ধ। ফলে সক্ষমতা থাকলেও দিনে আড়াই হাজার টন সার উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
সার কারখানার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসের বাড়তি দাম সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি হিসেবে পাওয়ার কথা। এ টাকা পাচ্ছে না বলে তাঁরা আগের দামে বিল পরিশোধ করছেন। এতে মাসে মাসে বকেয়া বিলের পরিমাণ বাড়ছে। সরকার ভর্তুকি ছাড় করলে গ্যাস বিল পরিশোধ করা হবে।
বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, তাদের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে চারটি থেকে সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গত বছরের ৫ জুন বিইআরসি দাম নির্ধারণ করে দেয়। এরপর গত জানুয়ারিতে নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হলেও সার কারখানার জন্য বাড়ানো হয়নি।
অথচ আগের দামেই (৪ টাকা ৪৫ পয়সা) গ্যাস বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে সরকারি সার কারখানা। বকেয়া আদায়ে পেট্রোবাংলাকে বিষয়টি জানায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। এরপর পেট্রোবাংলা তা নিয়ে জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে। এরপর জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হলেও এখন পর্যন্ত বকেয়া বিল পরিশোধ শুরু করেনি সরকারি সার কারখানা।
বিসিআইসি সূত্র বলছে, দেশে এখন বছরে ইউরিয়া সারের চাহিদা ২৭ লাখ টন। সরকারি-বেসরকারি মিলে বর্তমানে উৎপাদনক্ষমতা ২২ লাখ টন। আগামী অক্টোবরে ১০ লাখ টন উৎপাদন সক্ষমতার ঘোড়াশাল সার কারখানা চালু হবে। তা হলে দেশের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব। তবে গ্যাসের অভাবে তা হয়তো করা যাবে না। অধিকাংশ সময় সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা বা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ডলার খরচ করে সার আমদানি করতে হচ্ছে সরকারকে।
বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান বলেন, গ্যাসের বাড়তি দাম দিলে উৎপাদন খরচ অনেকে বেড়ে যাবে। কিন্তু বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই। গ্যাসের বাড়তি দাম দিলে লোকসান করে সার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে ভর্তুকি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এটি পাওয়া গেলে গ্যাসের বাড়তি দামের বকেয়া বিল পরিশোধ করা হবে।
তবে সারে ভর্তুকির বিষয়ে সরকারি নীতি পরিষ্কার নয় অনেকের কাছে। সার কারখানা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের আগের দামে প্রতি টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে খরচ হয় ২২ হাজার টাকা। আর নতুন দামে বিল পরিশোধ করলে খরচ দাঁড়াবে ৩২ হাজার টাকা।
সরকারের কাছে বিসিআইসি সার বিক্রি করে প্রতি টন ২৫ হাজার টাকায়। তাই বাড়তি দাম দেওয়া তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ছাড়া বর্তমানে বিশ্ববাজার থেকে প্রতি টন সার আমদানিতে খরচ হচ্ছে ৭০ হাজার টাকায়। এ ক্ষেত্রে বাড়তি খরচের টাকা ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে সরকার। অথচ গ্যাসের বাড়তি দাম দিয়েও আমদানির অর্ধেক দামে দেশে ইউরিয়া উৎপাদন করা সম্ভব।