বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তাঁর জন্য দোয়া চাইতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহরের মির্জা রুহুল আমীন মিলনায়তনে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় জেলা বিএনপি আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশের কৃষকের জন্য খালেদা জিয়া ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফ করে দিয়েছিলেন। পাঁচ হাজার টাকার কৃষিঋণ মাফ করে দিয়েছিলেন। আজ সেই নেত্রী ভীষণ অসুস্থ। বর্তমান আইনে তিনি জামিনযোগ্য ও মুক্তি তাঁর প্রাপ্য দাবি করে মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, হাজি সেলিম—এমনকি ক্যাসিনো-সম্রাটকেও জামিন দিয়েছেন, কিন্তু খালেদা জিয়া, যিনি এ দেশের মানুষের হৃদয়ের মণি, তাঁর জামিন দেওয়া হয় না। তিনি এখনো অন্তরীণ। তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর দিন গুনছেন।’
‘এই দোয়া মাহফিল থেকে আমরা পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার কাছে এই দোয়া করব,’ বলতে বলতে কণ্ঠ ধরে আসে মির্জা ফখরুলের। একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের নেত্রীকে সুস্থ করে দেন। তাঁর হায়াত দারাজ করেন। যিনি এই দেশের জন্য, মানুষের জন্য, এই জাতির জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন, তাঁকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের কোনো সিনিয়র নেতাকে অকারণে জেলে যেতে হয়নি। এমনকি তাঁদের সাধারণ সম্পাদককেও কোনো দিন জেলে যেতে হয়নি। তাঁদের দলের প্রধান শেখ হাসিনাকেও জেলে যেতে হয়নি। অথচ আমার বিরুদ্ধেই ১০০-এর ওপরে মামলা। বিএনপির প্রধান, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তিনি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে কারাগারে আছেন।’ ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে কবর দিয়ে দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের একমাত্র লক্ষ্য, যেমন করে হোক তাদের ক্ষমতায় যেতেই হবে। এ জন্য তারা প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করছে, সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ করছে। ঠিক নির্বাচনের আগে আগে গোটা দেশে ডিসি-এসপি, ইউএনও-ওসি সব পরিবর্তন করে তাদের মতো করে সাজাচ্ছে। তাদের কথা যারা শুনবে, শুধু তাদের এই জায়গায় নিয়ে আসবে। এই সরকারের আমলে সবখানে কেবল দলীয়করণ আর দলীয়করণ। এখনকার ডিসি আর এসপিদের কথা শুনে মনে হয়, তারা আওয়ামী লীগের বাবা।’
দেশে গণমাধ্যমের কোনো ক্ষমতাই নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ছবি নেওয়া, খবর পাঠানো। এরপর টেলিভিশনে দেখাবে দুই-তিন সেকেন্ড। আরও দুঃখের ব্যাপার, কয়েকটা চ্যানেল আছে, তাদের নাম বলব না। তারা আবার নতুন নতুন করে গল্প তৈরি করে। বিএনপি কী খারাপ কাজ করেছিল, সেই মিথ্যা গল্প বানিয়ে প্রচার করছে। তাদের যে নৈতিক দায়িত্ব, তা জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু নিজের স্বার্থে এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সেসব মিডিয়া তো বলে না, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি করছে। তাদের বড় বড় নেতা হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।’
মির্জা ফখরুল বিএনপির কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অনেক লড়াকু, কিন্তু জাগবেন কবে? এই সরকার নির্বাচন করে ফেললে জাগবেন? এইবার যদি তারা নির্বাচন করে নিতে পারে, আওয়ামী লীগ আমাদের কচুকাটা করবে। তাহলে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে হবে।’
দোয়া মাহফিলে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সহসভাপতি নুর করিম, ইউনুস আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।