মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর তরুণীকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজনকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ | ফাইল ছবি |
প্রতিনিধি রায়গঞ্জ: ‘সব সময় মেয়ের কথা মনে পড়ে। সেদিনের পর ভালোভাবে ঘুমাতে পারি না। ঘুমাতে গেলেই মনে হয় মেয়েটা যেন আমাকে ডাকছে। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে মেয়ের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করি। আমার মেয়েটাকে যারা কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছে, তাদের যেন তাড়াতাড়ি শাস্তি হয়। কিন্তু ছয় বছরেও বিচার পাইনি।’
টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার জাকিয়া সুলতানা ওরফে রূপার মা হাসনা হেনা খাতুন (৬৫) এসব কথা বলেন। নৃশংস ওই ঘটনার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। এ ঘটনায় বিচার সম্পন্ন হলেও এখনো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
জাকিয়ার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামে। তিনি বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে ঢাকা আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি শেষ পর্বে পড়াশোনা করছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি। তাঁর কর্মস্থল ছিল শেরপুর জেলায়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহে যাচ্ছিলেন জাকিয়া। চলন্ত বাসে পরিবহনশ্রমিকেরা তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে ফেলে যান। ঘটনার পর জাকিয়ার পরিচয় না পাওয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় প্রথমে পুলিশ এবং পরে পরিচয় নিশ্চিতের পর জাকিয়ার ভাই হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মধুপুর থানায় ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করেন। পরে ২৮ আগস্ট ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর, সুপারভাইজার সফর আলী, সহকারী শামীম, আকরাম ও জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া চার আসামিকে ফাঁসি, একজনের সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করেন। আসামি শামীম, আকরাম, জাহাঙ্গীর ও হাবিবুরকে ফাঁসি এবং সফর আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি জাকিয়ার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বলা হয়। রায়ের পর ১৮ ফেব্রুয়ারি সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন।
মামলার বাদী জাকিয়ার ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার কম সময়ে বিচারকাজ শেষ হয়েছে। অপরাধীরা শাস্তিও পেয়েছে। কিন্তু জাকিয়ার মামলাটি স্থবির হয়ে আছে। দ্রুত আপিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।