ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ঢাকা, ২৬ আগস্ট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বাসস, ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, রোহিঙ্গাদের অধিকার ও সম্মানসহ মিয়ানমারে ফেরাই একমাত্র সমাধান। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে মিয়ানমারের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, সেটি লক্ষ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এখানে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গেও আমরা আলাপ–আলোচনা করেছি। তারাও মিয়ানমারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। আশা করছি সমাধান হবে।’
শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘গণহত্যা ও বিচার: রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সেমিনার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আমাদের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে এর সমাধান চাই না। বিএনপির কাছে হয়তো সমাধানের পথ ভিন্ন, তারা কূটনৈতিক নয়, অন্য সমাধানের কথা চিন্তা করে। কিন্তু আমরা সর্বতোভাবে সব সময় এর সমাধানের জন্য চেষ্টা করে আসছি। এর ফলে বিভিন্ন সময় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু পরে তাদের কমিটমেন্ট রক্ষা করেনি। কয়েক দিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হয়েছে।’
রোহিঙ্গা সমস্যার নানা দিক তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখন দেশে রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্পগুলো জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ধর্মান্ধ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের সেখান থেকে ‘রিক্রুটমেন্টে’র একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে করে সেখানকার সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেমন অবনতি হচ্ছে, তেমনি এর সমাধান না হলে তা আমাদের দেশ শুধু নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’
সেমিনার শেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এ সমস্যা ঠিকভাবে সমাধান করতে পারেনি। ১৯৯১ সালে ও এর আগে ১৯৭৬-৭৭ সালে যখন রোহিঙ্গারা এসেছিল, তখন সবাইকে তারা ফেরত পাঠাতে পারেনি। হাজার হাজার রোহিঙ্গা রয়েই গিয়েছিল।
সিজিএস পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। স্বাগত ভাষণ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক জমিলা এ চৌধুরী।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন জিয়া রহমান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডার ক্লাও, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অবসরপ্রাপ্ত) ইশফাক ইলাহি চৌধুরী, দেশান্তর ও বাস্তুচ্যুতিবিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস পরিচালক এম সঞ্জীব হোসেন।