ধর্ষণ | প্রতীকী ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারণার মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলা ও ধর্ষণের অভিযোগে বগুড়ায় পুলিশের এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নম্বর-২ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মামলাটি করেন।
আদালতের বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির অভিযোগ তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনাল-২-এর পিপি আশেকুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আসামি এসআইয়ের নাম মিথুন সরকার (২৮)। তিনি শেরপুর জেলার বাসিন্দা। পুলিশের ৩৮তম ব্যাচের এসআই হিসেবে বগুড়ার শেরপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ইতিমধ্যেই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই ছাত্রীর বাড়ি বগুড়ায়। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একটি পারিবারিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের মে মাসে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়ার সূত্র ধরে শেরপুর থানার তৎকালীন এসআই মিথুন সরকার ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে ওই ছাত্রীর সঙ্গে এসআই মিথুনের পরিচয়। মিথুন ওই ছাত্রীর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে চ্যাটিং অ্যাপ ইমো ও টেলিগ্রামে যোগাযোগ করেন। এ সময় ওই ছাত্রী মিথুনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানতে চাইলে মিথুন পারিবারিক তথ্য ও স্থায়ী ঠিকানা গোপন করে তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ শহরে এবং এসআই হিসেবে শেরপুর থানায় কর্মরত বলে জানান। নিজেকে অবিবাহিত এবং কৌশলে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে এসআই মিথুন ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। বারবার প্রস্তাবের পর একপর্যায়ে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, তরুণীর জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটার কথা বলে গত ৩ জুন দুপুরের দিকে বগুড়ার শেরপুর শহরের ধুনট মোড় থেকে তরুণীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন। বিকেল আনুমানিক পাঁচটার দিকে পূর্ব পরিচিত একজনের বাসায় দাওয়াত খাওয়ার কথা বলে শেরপুর উপজেলার শাহ বন্দেগী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রিন টাউন টোলার গেট (খন্দকার টোলা) এলাকার আবু সাঈদ মাস্টারের চারতলা ফ্ল্যাট বাসার নিচতলায় একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে ওই তরুণীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে ধর্ষণ করেন মিথুন। এ ঘটনার পর ওই তরুণী মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে এসআই মিথুন ঈদুল আজহার পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন।
ওই তরুণী বলেন, ঈদের পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় গত ২৭ জুন এসআই মিথুনের সঙ্গে দেখা করতে তিনি শেরপুর থানায় যান। এ সময় জানতে পারেন, এসআই মিথুন সরকার হিন্দুধর্মাবলম্বী। বিষয়টি জানার পর ওই তরুণী মিথুনের কাছে ধর্মীয় পরিচয় গোপন করার কারণ জানতে চান। এ সময় পুলিশের এসআই মিথুন মেয়েটিকে জানান, ধর্মীয় পরিচয় দিলে তো প্রেম হতো না। ওই তরুণী বিয়ের কথা বললে মিথুন টালবাহানা শুরু করেন। এ সময় ওই তরুণী এসআই মিথুনের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় অভিযোগ করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা আপস-মীমাংসার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ওই তরুণী আজ আদালতে মামলা করেন।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী অভিযোগ করেন, এসআই মিথুন গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তাঁর বাড়িতে লোকজন পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এসব অভিযোগ করেও বিচার না পাওয়ায় আদালতে মামলা করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকেই নানা ধরনের হুমকি আসছে। তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই মিথুন সরকার বলেন, ‘ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাকে ভালোবাসি, তবে ধর্ম আলাদা হওয়ায় এবং পরিবার রাজি না থাকায় বিয়ে করা সম্ভব নয়। তার সঙ্গে যা কিছু করেছি, ভুল করেছি।’
বগুড়ার জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, উপপরিদর্শক মিথুন সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত ওই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত এবং পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।