পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে পাবনার সাঁথিয়ার পেঁয়াজের হাটগুলোতে কৃষকেরা দেশি পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটের একটি আড়তে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বেড়া: পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে পেঁয়াজের ভান্ডার বলে পরিচিত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়ার হাটগুলোতে কৃষকেরা দেশি পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। গত শনিবারের তুলনায় গত রোববার দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৪ থেকে ৫ টাকা দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের পাইকারি দাম দুই দিনে ১৫ থেকে ১৭ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। শুল্ক আরোপের খবর পাওয়ার পর থেকে দুই উপজেলার পেঁয়াজের আড়তে দুই দিন ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে না। তবে দুই উপজেলায় কৃষকের ঘরে এখনো ৭০ হাজার ৩০০ টন দেশি পেঁয়াজ মজুত আছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। এরপরই সাঁথিয়ার অবস্থান। সুজানগর উপজেলায় এবারের মৌসুমে ১৮ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়ে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।
কৃষি কার্যালয়ের হিসাবে চলতি বছরের পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম শেষ হয়েছে গত এপ্রিলে।

ওই সময়ে কৃষকেরা পাইকারি ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ এবার কৃষকের পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ ছিল গড়ে ৩০ টাকা। উৎপাদন খরচ না ওঠায় প্রান্তিক চাষিরা লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও অবস্থাপন্ন ও সচ্ছল কৃষকের ঘরে এখনো পেঁয়াজ আছে। গতকাল সোমবারের হিসাব অনুযায়ী, সুজানগর উপজেলায় ৩৫ হাজার ৩০০ টন ও সাঁথিয়া উপজেলায় ৩৫ হাজার টন মিলিয়ে দুই উপজেলায় এখনো ৭০ হাজার ৩০০ টন পেঁয়াজ মজুত আছে।

গতকাল সরেজমিনে কয়েকটি পেঁয়াজের হাটে গিয়ে জানা যায়, সুজানগর ও সাঁথিয়ার হাটগুলোতে শুধু দেশি পেঁয়াজেরই আমদানি হয়ে থাকে। হাটে কৃষকদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান। তবে সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাট, কাশিনাথপুর, বোয়ালমারী, সুজানগরের চিনাখরাসহ কয়েকটি হাটের আড়তে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজও বিক্রি হয়ে থাকে। আমদানি করা এসব পেঁয়াজ বিক্রি হয় স্থানীয় চাহিদা পূরণের জন্য।

হাটগুলো ঘুরে দেখা গেছে, হাটে স্বাভাবিকের তুলনায় পেঁয়াজের আমদানি বেশ কম। আড়তদার, ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা বলেন, ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে কৃষকেরা পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশা করছেন। তাই তাঁরা হাটে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। তবে এবার পেঁয়াজের ফলন কিছুটা মার খাওয়ায় ও ইতিমধ্যেই প্রচুর পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ায় কৃষকের ঘরে যত বেশি পেঁয়াজ আছে বলে ভাবা হচ্ছে, ঠিক ততটা নেই।

ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা বলেন, সপ্তাহ দুয়েক ধরে সুজানগর ও সাঁথিয়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম পাইকারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু শনিবার ভারতের শুল্ক আরোপের খবরের পর থেকে বাজার কিছুটা চড়তে থাকে। একই সঙ্গে কৃষকেরাও হাটে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। গতকাল বিভিন্ন হাটে পাইকারি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়।

সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক দেশি পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় আড়তদার বলে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘কৃষকেরা এখন সব খবর রাখেন। তাই ভারতের শুল্ক আরোপের খবরে তাঁরা পেঁয়াজের দাম বাড়ার আশায় হাটে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে চার-পাঁচ টাকা বাড়লেও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। আর কৃষি বিভাগ সাঁথিয়া ও সুজানগরে যে পরিমাণ পেঁয়াজ মজুতের কথা বলছে, তার চেয়ে কম মজুত রয়েছে বলে আমার ধারণা।’

করমজা চতুরহাটের ‘ইছামতী কাঁচামালের আড়ত’–এর ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, তাঁদের আড়তের মাধ্যমে বিভিন্ন সবজির সঙ্গে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে থাকে। ভারতের শুল্ক আরোপের খবরের পর থেকে তাঁদের আড়তে আমদানি করা কোনো পেঁয়াজ আসেনি।

এই আড়তে বসেই কথা হয় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিকারক আকছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে শনিবার ৪৫ টাকা কেজি দরে তাঁরা এক ট্রাক পেঁয়াজ এনেছিলেন। কিন্তু ভারতের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর থেকে কেজিতে ১৫ টাকা দাম বেড়ে গেছে। এতে তাঁরা ভারতীয় পেঁয়াজ আনা বন্ধ রেখেছেন।

সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাফিউল ইসলাম ও সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, অক্টোবরের শেষ দিকে এ এলাকায় আগাম জাতের পেঁয়াজের আবাদ শুরু হবে। আর সেই পেঁয়াজ উঠতে আরও মাস তিনেক সময় লাগবে। অর্থাৎ স্থানীয় নতুন পেঁয়াজ উঠতে এখনো পাঁচ থেকে ছয় মাস দেরি আছে। কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজ দিয়েই কিছুদিন চলবে।