প্রতীকী ছবি |
প্রতিনিধি চারঘাট: সচ্ছল পরিবারের স্কুলপড়ুয়া সন্তানদের টার্গেট করে প্রথমে বন্ধুত্ব করে তারা। এর পর নিজেদের খরচে মাদক সেবন করিয়ে গোপনে ভিডিও ও ছবি তুলে রাখা হয়। এক পর্যায়ে নিজেদের মাদক কেনার খরচ মেটাতে ভুক্তভোগী কিশোরদের ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করে। চাহিদামতো টাকা দিতে না পারলে অপহরণ ও নির্যাতনের খড়্গ নেমে আসে। এমন একটি অপরাধ চক্রের সন্ধান মিলেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়।
উপজেলার সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে আশপাশের কিছু তরুণ ওই চক্র তৈরি করেছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে বর্ষণ আহমেদ (২৫) ও শাওন আলীসহ (২৪) ১০-১২ জন। বুধবার এক শিক্ষার্থীকে (১৫) অপহরণ করে তারা। তাকে সাদীপুর এলাকায় আমবাগানে রাত পর্যন্ত বেঁধে রাখা হয়।
পরে ওই কিশোরের মায়ের মোবাইল ফোনে কল করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে বেধড়ক পিটিয়ে চারঘাট-বাঘা সড়কের মহিলা রোড এলাকায় ফেলে রেখে যায়। পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় কিশোরের মা শুক্রবার পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও শিশু নির্যাতনের মামলা করেন।
কিশোরের মায়ের ভাষ্য, ছয় মাস আগে থেকে তাঁর ছেলের আচরণে পরিবর্তন আসে। মাঝেমধ্যে ঘরের দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করত। কারণ জানতে চাইলে বলে না। টিউশনি, খাতা-কলম, টিফিনের টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করে না। টাকা কী করে, তাও বলে না। এক সপ্তাহ আগে কান্নাকাটি করে সব খুলে বলে। শুনে তিনি হতবাক।
পরিবারের সদস্যরা বলছেন, স্কুলের খেলার মাঠে বর্ষণের সঙ্গে পরিচয় হয় কিশোরের। এক দিন তাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ধূমপান করায়। পরে সাদীপুর বিলের একটি পুকুর পাড়ে ট্যাবলেট জাতীয় কিছু খেতে দেয়। এ সময় দলের অন্যরা ভিডিও করে। কয়েক দিন পর নেশাদ্রব্য কেনার জন্য তার কাছে টাকা চায়। দিতে না চাইলে ভিডিও ফেসবুকে ছাড়া এবং বাবা-মাকে দেখানোর ভয় দেখায়। এভাবে কিশোরের পড়াশোনার খরচের টাকা নিয়ে মাদক কিনত তারা। এক পর্যায়ে তাকে স্কুল ও বাড়ির বাইরে ওদের সঙ্গে যেতে নিষেধ করে পরিবার।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আতিকুল হক বলেন, শিক্ষার্থীর পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হয়তো কোনো গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়েছে। আপাতত সে শঙ্কামুক্ত।
চক্রটির অপকর্ম এটিই প্রথম নয়। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর দামি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। ধূমপানের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে টাকা ও ফোন ছিনিয়ে নেয়। এ ছাড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইল করে জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।
চারঘাট মডেল থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান চলছে।
ইউএনও মো. সোহরাব হোসেন বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে শিক্ষার্থীদের প্রতি নজর রাখতে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ বখাটেদের বিষয়ে তথ্য পেলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।