বর্ষায় আরাম দেবে জর্জেটের শাড়ি। মডেল: কাশমিরা নাহরীন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন: বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলের সুঘ্রাণ কেমন লাগে? হুম জানি, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কাঠফাটা রোদ্দুরের দিন পেরিয়ে যখন বর্ষা এসে শীতল আবেশ দিয়ে যায় প্রকৃতিতে, সেই ভালো লাগাটা আসলেই প্রকাশ করা যায় না। প্রকৃতির নতুন সাজে মনও যেন সাজতে চায়। মন সাজবে তখন, যখন নিজেকে প্রকৃতির মতো পরিপাটি করে সাজাবেন।

ওপরের কথাগুলোর সঙ্গে একমত গৃহিণী নাজিফা হাসান। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা—যে ঋতুই হোক না কেন, সময়ের উপযোগী বসন আর সাজ তাঁর পছন্দ। বাইরে যেতে হবে। কোনো একটা অনুষ্ঠান। এই সময়ে খুব দামি বা জমকালো পোশাকটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে। তাই খুব ভেবেচিন্তে বেছে নিতে হয় কোন পোশাক পরবেন। নাজিফা হাসান বলেন, ‘কোনো অনুষ্ঠানে গেলে বেশির ভাগ সময় শাড়িই পরি। বৃষ্টির দিনে জর্জেট শাড়ি পরাই ভালো।

পোশাকের দোকান জ্যোতির জ্যেষ্ঠ বিক্রেতা আরিফ আহমেদ জানান, বর্ষার সময়টাতে ক্রেতারা জর্জেট কাপড়ের শাড়িই বেশি কিনে থাকেন। কারণ, বৃষ্টিতে ভিজলে জর্জেট কাপড় তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় এবং কাপড়ে কোনো ধরনের দাগ থাকে না, যেটা অন্য শাড়িতে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘জর্জেটের শাড়িতে ছিটে দাগও পড়ে না (তিলা বা ছিতি হিসেবে পরিচিত), তাই বৃষ্টির দিনে এমন শাড়ির সুবিধা বেশি।’

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) সহযোগী অধ্যাপক কামরুন নাহারের প্রিয় পোশাক শাড়ি। কর্মস্থলে প্রায় প্রতিদিনই পরেন শাড়ি। এমনকি কোথাও বেড়াতে গেলে কিংবা কোনো অনুষ্ঠানেও। বৃষ্টি-বাদলের দিনে কী পরা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব সুতি শাড়ি একদম নরম, ভিজলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, আমি সেগুলো পরি। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সুবিধা জর্জেটে। বর্ষার দিনে জর্জেট পরাই ভালো।’ রেশমি, অর্থাৎ সিল্কের শাড়িও বৃষ্টির দিনে আরামদায়ক। তবে সিল্ক তাড়াতাড়ি শুকিয়ে গেলেও কাদার ছিটে বা ময়লা পানির দাগ কোনোভাবেই উঠবে না বলে জানান সপুরা সিল্কের জ্যেষ্ঠ বিক্রেতা মো. সেলিম রেজা। অন্যদিকে আরিফ আহমেদ জানালেন, কিছু কিছু সিল্ক আছে যেগুলো কৃত্রিম (সিনথেটিক) বা নিম্নমানের, সেগুলোর দাগ উঠে যেতে পারে। তবে খাঁটি সিল্ক হলে দাগ উঠবে না। এমনকি ড্রাই ওয়াশেও না।

একই শাড়িতে নানা ধরনের নকশা দেওয়া হচ্ছে মডেল: কাশমিরা নাহরীন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বর্ষায় জর্জেট শাড়ির সঙ্গে সুতি প্রিন্টের ব্লাউজ পরা যায়। হাফ হাতা কিংবা হাতা কাটা ব্লাউজের নকশাটি ফুলেল মোটিফের হলে চলতি ঋতুর সঙ্গে ভালো মানাবে। এমনটা জানান ফ্যাশন হাউস ড্রেসিডেলের স্বত্বাধিকারী মায়া রহমান। তিনি বললেন, এখন চলছে গোল কিংবা বোট গলার ব্লাউজ। একরঙা ব্লাউজও পরা যেতে পারে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে। বর্ষার জর্জেট শাড়ির নকশায় এখন জনপ্রিয় ফুলেল ছাপা। বাদলা দিনে উজ্জ্বল রঙের শাড়িই বেশি মানাবে। জর্জেট শাড়ির আলাদা বিশেষ করে যত্নও নিতে হয় না।

ফুলেল নকশা ছাড়াও নানা নকশার জর্জেটের শাড়ি এসেছে বাজারে—জানালেন স্বপ্ন লাইফের ডিজাইনার তামান্না চৌধুরী। তিনি বললেন, ‘এবার বেশ চল থাকছে ডিজিটাল প্রিন্টের শাড়ি। ফুলের বাইরে জ্যামিতিক নকশা কিংবা মানুষের ছবির থ্রিডি প্রিন্টের শাড়িও পাওয়া যাবে বাজারে। এসব শাড়ির সঙ্গে একরঙা ব্লাউজ বেশি মানাবে। পেটিকোটের কাপড় ক্যাশমেলন হলে আরামদায়ক হবে। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন একরঙা শাড়ি এই বর্ষায় না পরতে। কেননা, কোনোভাবে একটু দাগ বসে গেলে শাড়ি দেখতে খারাপ লাগতে পারে।

রাজধানীর যেকোনো শাড়ির দোকানে পাওয়া যাচ্ছে সহজপ্রাপ্য নানা রং, নানা ঢং আর নানা দামের জর্জেটের শাড়ি। সব বিক্রেতার একই মত, বর্ষার দিনে জর্জেটের শাড়ি সবচেয়ে উপযোগী। আরিফ আহাদ জানালেন জর্জেটের মধ্যে ওয়েটলেস, পিওর, ক্রেপ, মাইক্রো, শিফন ইত্যাদি কাপড় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।