রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ

উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে লিফলেট বিতরণ করেছে প্রগতিশীল দুই ছাত্র সংগঠন। মঙ্গলবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনে | ছবি: সংগৃহীত 

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অপসারণের দাবিতে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও নাগরিক ছাত্র ঐক্য। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারা এ কর্মসূচি পালন করে। সপ্তাহজুড়ে এই লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চলবে বলে জানান নেতা-কর্মীরা।

বিতরণ করা লিফলেটে বলা হয়েছে, উপাচার্য নেতৃত্ব দিয়ে পূর্বতন সমস্যাগুলো সমাধান করে নতুন সম্ভাবনার পথে বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য যাচ্ছেন তার উল্টো পথে। পূর্বের সমস্যাগুলোর সমাধান তো করতেই পারেননি। বরং নতুন নতুন সমস্যা তৈরি করছেন। শিক্ষার্থীদের অধিকার সংকুচিত করছেন, সঙ্গে আছে শিক্ষার্থীদের ওপর ফি বাড়ানোর নতুন নতুন ফন্দিফিকির। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে প্রক্সিকাজে জড়িত থাকা এক শিক্ষার্থী প্রথম হন। বর্তমানে একজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার মানে আরও অসংখ্য শিক্ষার্থীর এভাবে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর প্রমাণ, গত বছর প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের খুঁজে বের করে ভর্তি বাতিল করার ইচ্ছা উপাচার্যের নেই। সম্ভবত তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, না হলে তিনি অধিকতর তদন্ত করে তাঁদের খুঁজে বের করতেন।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ জন ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৬০ জন অকৃতকার্য শিক্ষার্থীকে পোষ্য কোটার মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়েছে উল্লেখ করে লিফলেটে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানেরা ফেল করেও ভর্তি হতে পারেন। অথচ হতদরিদ্র মানুষের সন্তানেরা উচ্চ মূল্যে ফরম কিনে ভালো নম্বর পেয়েও ভর্তি হতে পারেন না। এই উপাচার্য তিনবার ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করলেও সমতা নিশ্চিতে ডাকাতির মাধ্যম পোষ্য কোটা বাতিল করেননি।

গত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এর পেছনে উপাচার্যকে দায়ী করে লিফলেটে বলা হয়, আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই সমস্যা অতীতের থেকে আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। কীভাবে এর প্রতিরোধ করা যাবে, তার উদ্যোগ নেওয়া উপাচার্যের দায়িত্ব। তিনি তা করেননি। কারণ, এটাকে তাঁর কাছে সমস্যা মনে হয়নি। তিনি তো মুখিয়ে আছেন নিয়োগ–বাণিজ্য আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাটের নেশায়। ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ভর্তি ফরম বিক্রি করে আয় হয় যথাক্রমে ১৮ কোটি ও ২৪ কোটি টাকা। এত টাকা দিয়েও তিনি প্রক্সি ঠেকাতে পারেন না, তাহলে তিনি কোন যোগ্যতায় উপাচার্যের পদে থাকবেন? এ ছাড়া গত দুই বছরে যিনি একটি সিটও দখলমুক্ত করতে পারেননি, আর কত বছর উপাচার্য থাকলে ৫০০ সিট দখলমুক্ত করতে পারবেন? উপাচার্যই এসব করার সুযোগ দিচ্ছেন, যাতে দখলদার সংগঠন তাঁর বিরুদ্ধে কথা না বলে এবং তাঁর অবাধ লুটপাট খুব সহজ হয়।

আবাসিক হলে ভর্তি ও বিজ্ঞান গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থী মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, বিনোদপুরে স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত না করা, আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন লিফলেট বিতরণকারী নেতা-কর্মীরা। এসব দাবি জানিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, উপাচার্যের কাজটা কী? কেন তিনি উপাচার্য থাকবেন?

জানতে চাইলে নাগরিক ছাত্র ঐক্যর সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আসন–বাণিজ্য, ভর্তি জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। উপাচার্যের দায়িত্ব সমস্যাগুলো সমাধান করা ও বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া। উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় দুই বছর হয়েছে। কিন্তু কোনো সমস্যার সমাধান হয়নি, উল্টো বেড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রক্সি জালিয়াতি ও আসন–বাণিজ্যের অভিযোগ এলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। এই উপাচার্য ছাত্রলীগের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। অবিলম্বে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।