নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনের পরিকল্পনা করেন সাবেক স্বামী : র‍্যাব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নারী কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার চালক মাসুদ (মাঝে), হাফিজ (ডানে) ও আবদুল জলিল (বাঁয়ে)। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে | ছবি: র‌্যাবের সৌজন্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নারী কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনের পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁর সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ।

আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানিয়েছে র‍্যাব। যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার ওই নারী কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় গাড়ির চালক মাসুদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।

গতকাল শুক্রবার ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার বাকি দুজন হলেন আবদুল জলিল ও হাফিজ। এ নিয়ে মামলার ছয়জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরও তিনজন আসামি হলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। ওই নারী কর্মকর্তাকে অপহরণে জড়িত পাঁচজনই চালক মাসুদের ঘনিষ্ঠ, বলছে র‍্যাব। 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান। তিনি বলেন, মাসুদসহ গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেছে নারী কর্মকর্তাকে অপহরণের পরিকল্পনায় ছিলেন তাঁর সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ। ১ আগস্ট চাকরিচ্যুত করার পর চালক মাসুদ ওই নারী কর্মকর্তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। পরে তিনি ওই নারী কর্মকর্তার সাবেক স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন আগের স্বামী মাসুদকে ৭০ হাজার টাকা দেন। পরে মাসুদ তাঁর পাঁচ সহযোগীর মধ্যে ওই টাকা ভাগ করে দেন। নারী কর কর্মকর্তার বর্তমান চালকের সঙ্গে অপহরণকারী দলের সদস্য হাফিজের সুসম্পর্ক ছিল। বর্তমান চালকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই নারীর অবস্থান জেনে নেন অপহরণকারীরা।

আগের স্বামীর পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ আগস্ট রাত আটটার দিকে ওই নারী কর্মকর্তা মগবাজার থেকে বেইলি রোডে পৌঁছালে অপহরণকারীরা একটি মোটরসাইকেল ও রিকশা দিয়ে তাঁর গাড়ির গতি রোধ করেন। তখন গাড়ির চালক নিচে নামলে তাঁকে মারধর করে নারীর গাড়ির চালকের আসনে বসেন আসামি মাসুদ। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে তাঁরা হাতিরঝিলের একটি বাসায় আসেন। তবে বাসার দরজার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় পরে তাঁর গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে থাকেন। পরে দিবাগত রাত ১২টার দিকে কাঁচপুরে মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে ওই নারীকে বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়। ওই নারীর কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয় ৫০ লাখ টাকা। নগদ দেড় লাখ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন আসামিরা। পরদিন তাঁকে মাদারটেকের একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, মাদারটেকের বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর মাসুদ আবার ওই নারীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মাসুদসহ অন্যদের ওই নারী কর্মকর্তাকে হাতিরঝিলের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান। আর গাড়ির পাহারায় ছিলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। সুযোগ বুঝে ওই নারী কর্মকর্তা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে তাঁকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রমনা থানায় একটি মামলার করেন ওই কর্মকর্তা।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনে সরাসরি জড়িত চালক মাসুদ গাড়ি চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া বাস চালানোর সময় দুর্ঘটনায় কয়েকজন নিহত হন, সেই মামলার তিনি আসামি।