আলেম–ওলামাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী: জঙ্গিবাদ–সন্ত্রাস নির্মূলে সহযোগিতা করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১৩ আগস্ট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাসস, ঢাকা: দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারকে সাহায্য করার জন্য সবাইকে, বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

রোববার সকালে জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩-এর জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি; যাতে আমাদের সন্তানেরা বিপথে যেতে না পারে।’

প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামাদের প্রতি সবার মধ্যে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী ছড়িয়ে দিতে বলেন; যাতে কেউ কাউকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পথে নিয়ে যেতে এবং ইসলামের বদনাম করতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদী, তারা সন্ত্রাসী। তারা কোনো ধর্ম, দেশ বা জাতিগোষ্ঠীর নয়। তাই সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের ধর্মের মান–ইজ্জতটা রক্ষা করবেন। কেউ যেন এই বিপথে না যায়। সন্তানের নিয়মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয় এবং কার সঙ্গে মিশছে, সে বিষয় আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। সেই ধর্মের সঙ্গে সামান্য মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য কেন সন্ত্রাসী নামটা যুক্ত হবে? সত্যিকারের যারা ধর্মে বিশ্বাসী, তাদের জন্য এটা খুব কষ্টদায়ক। কাজেই এসব কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলের ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানা ধর্মের লোক এই বাংলাদেশে আছে এবং যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, এটা আমাদের নবী করিম (সা.)–এর শিক্ষা। আমরা সেভাবেই চলব। চূড়ান্ত বিচার বা শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কাজেই কে কোন ধর্মের, কে হিন্দু না মুসলমান না বৌদ্ধ না খ্রিষ্টান না কাদিয়ানি, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের না। যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।’ বিচারের ভার নিজেদের হাতে তুলে না নিয়ে বরং আরও বেশিসংখ্যক মানুষ যেন ইসলামের ছায়াতলে আসে, সে জন্য সবার প্রচেষ্টা থাকা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই যে কোমলতি ছেলেদের মাথাগুলো খারাপ করে দিয়ে তাদের বিপথে চালানো, তাদের জীবনটাকে ধ্বংস করা, সুইসাইড অ্যাটাক করে মানুষ মারা—এটা তো ইসলাম ধর্মে মহাপাপ, গোনাহের কাজ। সুইসাইড করলে তো কেউ বেহেশতে যাবে না, এটাই তো বলা আছে।’

কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘সুইসাইড (আত্মহত্যা) করে মানুষ হত্যা করে কোন বেহেশতে যাচ্ছে তারা। এই বিপথ থেকে তাদের সরাতে হবে। একটা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মের নামে বদনাম দেওয়া হয়। এই বদনামের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে।’

বিজয়ী পাঁচজন হাফেজের হাতে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, নগদ অর্থের চেক ও সনদ তুলে দেন। তাঁরা হচ্ছেন প্রথম আফফান বিন সিরাজ, দ্বিতীয় মো. ওসমান গণি, তৃতীয় মো. আবু জাফর শাকিল (দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী), চতুর্থ মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ও পঞ্চম মো. মোতাসিম বিল্লাহ।

জাতীয়ভাবে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করায় উদ্যোক্তা-বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলেমেয়েরা প্রতিবছরই অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালো ফল অর্জন করছে। তারা একাধিক গ্রুপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় মর্যাদা ও গৌরবের।’