আল জাজিরা, ইসলামাবাদ: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক সংবাদমাধ্যমে চমকপ্রদ খবর বেরিয়েছে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত বছর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। ওই সাংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, এমন একটি গোপন কূটনৈতিক তারবার্তা তাদের হাতে রয়েছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি ওই গোপন বার্তা সম্পর্কে জানতেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করেছিল।
পরে অবশ্য ইমরান খান সেই অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি ভালো সম্পর্ক চান। তবে তাঁকে সরানোর জন্য তিনি তাঁর উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বারবার অভিযোগ তোলেন।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন। তোশাখানায় দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তিনি পাঁচ বছর নির্বাচন করতে পারবেন না। অবশ্য ইমরান তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছিলেন, তাঁকে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে এই মামলায় দণ্ড দেওয়া হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট তাদের ওয়েবসাইটে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর মধ্যকার কথিত কথোপকথনের বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। গত বছরের ৭ মার্চ তাঁদের মধ্যে সেই কথাবার্তা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কো সফরে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পর মাজিদ ও ডোনাল্ড লুর মধ্যে এই কথোপকথন হয়। একই দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল।
কথিত কথোপকথনে ডোনাল্ড লু পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মাজিদকে বলেন, ইমরান খানের মস্কো সফর এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের ‘নিরপেক্ষ অবস্থানে’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ‘খুবই উদ্বিগ্ন’।
লু বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে ওয়াশিংটন সবাইকে ক্ষমা করে দেবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর তাঁর সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কথিত কথোপকথনের বিস্তারিত ‘গোপন তারবার্তা’ ইসলামাবাদে পাঠিয়েছিলেন মাজিদ।
ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ফাঁস হওয়া পাকিস্তান সরকারের নথিপত্র অনুযায়ী মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের এক মাস পর পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হয়। ওই ভোটে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তানে কে প্রধানমন্ত্রী হবে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নিয়েছে—এমন কোনো কথা ওই প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে হ্যাঁ, ইমরান খানের রাশিয়া সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ও একান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’
মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত নিজেই বলেছেন, নেতৃত্ব ঠিক করার মতো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরাও বলেছি, এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনের বিষয়ে এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি।
তবে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার আগপর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকা রানা সানাউল্লাহ গতকাল বুধবার এক টুইট বার্তায় ওই প্রতিবেদন নাকচ করে দেন। তিনি টুইট বার্তায় বলেন, ‘এই গল্পে নতুন কিছু না থাকলেও তথ্যের সত্যতা ও নথিপত্রের উৎস সম্পর্কে জানতে তদন্ত দরকার। আসলে এ ধরনের কাজ ক্ষতিকর এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
পাকিস্তানের সাবেক এক কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গোপন তারবার্তার কথোপকথনের ধরন ও ভঙ্গি আমাকে অবাক করেছে। তবে আমি মনে করি না, কথিত ষড়যন্ত্রের কোনো কিছু এর মধ্যে আছে।’
তবে পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) মুখপাত্র রউফ হাসান বলেন, তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের অবস্থানকে সমর্থন করছে ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন।
হাসান বলেন, সরকার এই গোপন তারবার্তা পাওয়ার পর খান ঠিক কাজই করেছেন। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) সঙ্গে তারবার্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। সবাই এ বিষয়ে একমত হয়েছিলেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এটা নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ এবং এ ধরনের পদক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পিটিআইয়ের মুখপাত্র বলেন, শরিফ সরকারও ওই তারবার্তার বিষয়টি নিয়ে এনএসসির সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানেও পিটিআই সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।