কূটনৈতিক প্রতিবেদক: প্রায় দুই বছরের বিরতি শেষে আগামী মাসে ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে পঞ্চম কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের সংলাপে দুই দেশের বন্দী বিনিময় চুক্তি এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। পাশাপাশি ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দেশের সহযোগিতার নতুন পরিসর নিয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গি (আইপিও) প্রকাশের পর দুই দেশ এই কৌশলগত সংলাপে বসছে।
সংলাপটি এমন একসময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরব রয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ অংশীদারত্ব সংলাপেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। খুব সংগত কারণে এবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকেও নির্বাচন ও মানবাধিকারের বিষয় গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য এবার অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পাশাপাশি ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের বিষয়টি সামনে এনেছে। ফলে সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হয়, এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়টি যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপেও তুলতে পারে।
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ওই সংলাপে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি ফিলিপ বার্টন তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেবেন।
দুই দেশের পঞ্চম কৌশলগত সংলাপ উপলক্ষে আজ রোববার দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক এবং সর্বশেষ সংলাপের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সংলাপে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন সহায়তা, সুশাসন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের মতো দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয় উঠে আসবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময় ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানতে চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ গত এপ্রিলে আইপিও ঘোষণা করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের আলোচনায় ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দেশের সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রের প্রসঙ্গটি আসতে পারে।
মানবাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বলেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করা, শ্রম অধিকার, মতপ্রকাশ, গণমাধ্যম ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর জোর দেয়। ফলে এবারের বৈঠকেও এ বিষয়গুলো আলোচনায় আসবে।
প্রসঙ্গত, দুই দেশের চতুর্থ সংলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে অপরাধীরা যাতে নির্বিঘ্নে বসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িত থাকতে না পারে, সে বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়েছিল। এরই আলোকে বন্দী বিনিময় চুক্তি এবং পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি সইয়ের বিষয়ে দুই দেশ রাজি হয়েছিল।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাসহ একাধিক মামলায় দণ্ডিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় দেড় দশক ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তাঁকে হস্তান্তরের জন্য অতীতে যুক্তরাজ্যের সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ। এ ছাড়া একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন বলে ধারণা বাংলাদেশের। পলাতক থাকায় তাঁর দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিছু নাগরিক রয়েছেন, যাঁরা সেখানে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দী বিনিময় ও পারস্পরিক আইনি সহায়তা চুক্তি সই করা হলে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী এবং দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়িত ব্যক্তিদের এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।