ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই বোন মাইসা ও মাইমুনা। দুই মেয়ের শয্যাপাশে উদ্বিগ্ন মা নাজনীন আক্তার। রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কিছু হাসপাতাল এখন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় থাকা কিছু হাসপাতালে শয্যা খালি থাকছে। রোববার অধিদপ্তরের তালিকায় থাকা তিনটি হাসপাতালে কোনো রোগী ভর্তি ছিল না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অদক্ষতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ১১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে এ বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৯৮ জনে। রোববার আরও ২ হাজার ৯০৫ জন নতুন রোগী সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে। এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা হলো ৮৫ হাজার ৪১১।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ঢাকা শহরের ১৮টি সরকারি হাসপাতাল এবং সরকারের আর্থিক সহায়তায় চালিত স্বায়ত্তশাসিত দুটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দিয়ে আসছে। তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, একটি হাসপাতালে কোনো দিন কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। একাধিক হাসপাতালে অনেক শয্যা খালি পড়ে থাকে। সেখানে রোগী যায় না, অনেকে জানেই না যে এসব হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা হয় কি না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, আটটি হাসপাতালে ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন। অন্যদিকে শুধু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন ৪৩১ জন ডেঙ্গু রোগী।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘এসব হাসপাতালে শয্যা খালি আছে। রোগী যাচ্ছে না।’ রোগীরা কি জানেন কোন কোন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা হচ্ছে, তাঁদের কি জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘রোগীরা জানেন, জানানোর জন্য টেলিভিশনে স্ক্রল দেওয়া হচ্ছে।’
হাসপাতালে রোগী নেই
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্যে দেখা যায়, রোববার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) কোনো রোগী ভর্তি ছিল না। এ বছর এই হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয়নি।
নিটোরের পরিচালক অধ্যাপক কাজী শামীমুজ্জামান বলেন, এই হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয় না। হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু ওয়ার্ড নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, নিটোরে ডেঙ্গু ওয়ার্ড খোলার নির্দেশ দিয়েছিল অধিদপ্তর। অন্যদিকে নিটোরে মেডিসিনের পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই বলে জানা গেছে।
কামরাঙ্গীরচরের ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও ঢাকা মহানগর শিশু হাসপাতালে রোববার কোনো রোগী ভর্তি ছিলেন না। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সাভার) ভর্তি ছিলেন একজন, ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন দুজন ডেঙ্গু রোগী। ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে চারজন এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ছিলেন আটজন রোগী। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ছিলেন ১৫ জন রোগী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বারবার বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেট হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৮০০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু রোববার সেখানে ২৩৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তবে একটি সূত্র বলছে, ৮০০ শয্যার হাসপাতাল চালানোর মতো জনবল এখানে নেই।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। একটি শয্যায় একাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একই পরিস্থিতি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তাতে ৪২ শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রোববার ওই হাসপাতালে ১১১টি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি ছিল। ৬৯টি শিশুকে অন্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু রোগীর জায়গা দিতে পারছে না। অন্যদিকে কিছু হাসপাতালের জায়গা কাজে লাগাচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি দায়িত্বশীল হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না। এই সময়ে কাজে সমন্বয়ের খুব প্রয়োজন। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি, যেসব হাসপাতালে শয্যা আছে বা যেসব জেলায় রোগী বেশি, সেখানে দ্রুততম সময়ে সাময়িকভাবে চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্যালাইন পাঠাতে হবে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বারবার বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেট হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ৮০০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু রোববার সেখানে ২৩৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তবে একটি সূত্র বলছে, ৮০০ শয্যার হাসপাতাল চালানোর মতো জনবল এখানে নেই।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। একটি শয্যায় একাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। একই পরিস্থিতি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। তাতে ৪২ শিশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু রোববার ওই হাসপাতালে ১১১টি ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি ছিল। ৬৯টি শিশুকে অন্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গু রোগীর জায়গা দিতে পারছে না। অন্যদিকে কিছু হাসপাতালের জায়গা কাজে লাগাচ্ছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি দায়িত্বশীল হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতি হতো না। এই সময়ে কাজে সমন্বয়ের খুব প্রয়োজন। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি, যেসব হাসপাতালে শয্যা আছে বা যেসব জেলায় রোগী বেশি, সেখানে দ্রুততম সময়ে সাময়িকভাবে চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্যালাইন পাঠাতে হবে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে।’