হাইকোর্ট ভবন | ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং’ (কটূক্তি, হেনস্তা বা অপমান করা) ও ‘র্যাগিং’ (হুমকি, গালাগাল, নিপীড়ন) রোধে সরকারের করা নীতিমালার বিষয়টি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তিন মাসের মধ্যে জানানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে শিক্ষাসচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন। এক শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে পাঁচ বছর আগে দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুল এবং অপর এক শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুই বছর আগে দেওয়া রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেওয়া হয়।
স্বতঃপ্রণোদিত রুলে ব্যাখ্যাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী অনীক আর হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধসংক্রান্ত নীতিমালাটি ইতিবাচক। আগে বুলিং ও র্যাগিংয়ের কোনো সংজ্ঞা ছিল না। এই নীতিমালার মাধ্যমে বিষয়টি আইনগত কাঠামোতে এসেছে। বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনসহ করণীয় সম্পর্কে বলা আছে।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধসংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ গত ২ মে প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর গত ২৯ জুন তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। নীতিমালায় মৌখিক, শারীরিক, সামাজিক, সাইবার ও যৌনসংক্রান্ত বুলিং ও র্যাগিংয়ের সংজ্ঞা রয়েছে। এই নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র্যাগিং প্রতিরোধে এক বা একাধিক কমিটি গঠন ও গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। নীতিমালা অনুসারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে র্যাগিং ও বুলিংয়ে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন/বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বা সদস্যরা বুলিং ও র্যাগিংয়ে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট বিধি ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইনে অনুসারে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যে দুই ঘটনাসূত্রে নীতিমালা
২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে ‘অপমানের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা’ শিরোনামে পরদিন প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেদিনই বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের চারজন আইনজীবী। শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুল দিয়ে এ ধরনের ঘটনা রোধে একটি সমন্বিত নীতিমালা করতে নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে ২০২১ সালের ৮ জুলাই বিবিসি বাংলা ‘মোটা বলে সহপাঠী ও শিক্ষকের লাঞ্ছনার শিকার মৃত কিশোরের পরিবার যা বলছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ একই বছরের ১৬ আগস্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘বুলিং’ রোধে নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং বিদ্যালয়ে বুলিং রোধে নীতিমালা বা গাইডলাইন তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পৃথক রুল একসঙ্গে শুনানির জন্য আদালতে ওঠে। রুল শুনানিতে কয়েক দফায় নীতিমালার খসড়া দাখিল করা হয়। নীতিমালার গেজেট গতকাল আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
স্বতঃপ্রণোদিত রুলে ব্যাখ্যাকারী (ইন্টারভেনার) হিসেবে আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা ও অনীক আর হক এবং রিটের পক্ষে আইনজীবী তানভীর আহমেদ শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাসের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা পাঠাতে শিক্ষাসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছয় মাসের মধ্যে কমিটি গঠনসহ নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নীতিমালায় বুলিং ও র্যাগিংয়ের জন্য ফৌজদারি শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তবে শাস্তি কী হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট করে শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।