বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেগুনবাগিচায় স্বাধীনতা হলে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। ঢাকা, ২৩ আগস্ট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: কেন এখনো গণ-অভ্যুথান হচ্ছে না—এই প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পরিবর্তন আনতে হলে বড় রকমের ঝাঁকুনি-সংগ্রাম দরকার। সে সংগ্রামে আমরা আছি। কিন্তু তা যথেষ্ট কি না, তা এখনই চিন্তা করতে হবে। সুনামির মতো অভ্যুথান ছাড়া এই দানবকে সরানো সম্ভব না।’
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত স্বাধীনতা হলে আজ বুধবার আয়োজিত এক আলোচনা সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ‘নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে গণ অধিকার পরিষদ (নুরুল-রাশেদ)।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কারও মানবাধিকার নেই। সাম্প্রতিক সব ঘটনাই দেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। কেন এখনো গণ-অভ্যুথান হচ্ছে না? আওয়ামী লীগ নিজেদের দেশের মালিক মনে করে। পরিবর্তন আনতে হলে বড় রকমের ঝাঁকুনি-সংগ্রাম দরকার।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শিষ্টাচার নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁদের নেতারা বলছেন, আমার থেকে জঘন্য মিথ্যাবাদী নাকি কেউ নেই। তারা যে ভাষায় কথা বলে অভ্যস্ত, আমরা সে ভাষায় কথা বলে অভ্যস্ত না। তারা নাম ধরে গালিগালাজ করে, এটা কোনো রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়। আওয়ামী লীগের শরীরী ভাষাই সন্ত্রাসী।’
চলমান আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তরুণদের ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়। এত আন্দোলন হচ্ছে, কিন্তু তরুণদের সামনে কম দেখছি। পরিবর্তন, সংগ্রাম, লড়াই করতে হবে তরুণদের। সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকার হরণ হচ্ছে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বিষয়ে প্রতিবাদ দেখি না। রাস্তায় নামে না। দুর্ভাগ্য আমাদের, এখন তরুণ-যুব-ছাত্রদের সামনে দেখতে পাই না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের সংবিধান নষ্ট করে ফেলেছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে সংবিধান সংশোধন করেছে। মানুষের সংবিধান নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে দেওয়া রায় পরিবর্তন করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে দুর্নীতি পরায়ণ জাতিতে পরিণত করেছে আওয়ামী লীগ।
সভাপতির বক্তব্যে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সরকারের পতন ঘটবে। কাটাছেঁড়া করে সংবিধানকে গণবিরোধী করা হয়েছে। বিরোধী মত দমনে পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের মতো কথা বলছেন। পুলিশ প্রশাসনে ছাত্রলীগের নেতাদের ঢোকানো হয়েছে। তাঁরা ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন অভিযোগ করেন, ভোটার তালিকা করার জন্য মাঠে নামানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পছন্দের লোকজনকে। ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে ভুয়া জন্মনিবন্ধন নিয়ে ভোটার বানানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য এত বেশি যে গরিবের খাবার একটি ডিম এখন দুই ভাগ করে খেতে হচ্ছে। মুরগির চামড়াও কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে।
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এবি পার্টির আহ্বায়ক সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান প্রমুখ। গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম, ফাতেমা তাসনিম ও নুরে এরশাদ সিদ্দিকী সভায় বক্তব্য দেন।