পুলিশের উঠান বৈঠকে হত্যা মামলার তিন আসামি ( বা থেকে গোলচিহ্নিত) মোহাম্মদ রাশেদ রানা, হোসাইন মামুন ও আজগর আলী। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় | ছবি: সংগৃহীত 

প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় চাঞ্চল্যকর মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত তিন আসামিকে মঞ্চে বসিয়ে ‘উঠান বৈঠক’ করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামে জনসচেতনতামূলক ওই সভার আয়োজন করে সিএমপি (চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ) ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং কমিটি।

অভিযোগপত্রভুক্ত তিন আসামি হলেন আজগর আলী, মোহাম্মদ রাশেদ রানা ও হোসাইন মামুন। রাশেদ রানা কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, আজগর আলী চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হোসাইন মামুন চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি।

এ ঘটনায় হত্যা মামলার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে শঙ্কিত নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের পরিবার। তাঁর ছোট ভাই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পুলিশের সঙ্গে মিটিং করে আসামিরা শক্তি দেখিয়ে গেলেন। এতে মামলার সাক্ষীরা ভীত হতে পারেন। ফলে মামলার সুষ্ঠু বিচারে প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি এলাকায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর গ্রামে জনসচেতনতামূলক এ সভার আয়োজন করা হয়। ৮৯ নম্বর বিট পুলিশিং ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবদুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান। প্রধান অতিথি ছিলেন কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আরিফ হোসেন। ওই বৈঠকে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে একই মঞ্চে বসতে দেখা গেছে মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর হত্যা মামলার তিন আসামিকে।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর কর্ণফুলী ডক এলাকায় ইছানগর গ্রামের বাসিন্দা মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে কর্ণফুলী থানায় মামলা করেন। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। চাঞ্চল্যকর মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। এ আদালত দীর্ঘদিন বিচারকশূন্য থাকায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। ৪৫ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

বৈঠকে বক্তব্য দেওয়া প্রসঙ্গে আজগর আলী বলেন, ‘আমরা জামিনে আছি। তাই বক্তব্য দিয়েছিলাম। মামলায় ষড়যন্ত্র করে আমাকে আসামি করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষীও দেয়নি। আশা করি, খালাস পাব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আরিফ হোসেন বলেন, এ রকম কেউ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা জানলে তাঁরা কখনো বসতে দিতেন না। বিষয়টি অনেকটা অজ্ঞাতসারে হয়ে গেছে।

মামলার বাদী ও নিহত মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম বলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে আসামিদের বৈঠকের পর আমরা অনেকটাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। পুলিশ কেন এমনটি করল, তা–ও বুঝতে পারছি না।’