বগুড়ায় এবার জিপিটিসি ও জিপিসিএর অ্যাপের ফাঁদে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা

অনলাইনে প্রতারণা | প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ায় এমটিএফই (মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ)–এর পর আরও কয়েকটি অনলাইন এমএলএম প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহকেরা। এর মধ্যে শহরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীরা কয়েক লাখ টাকা করে বিনিয়োগ করেছেন জিপিটিসি ও জিপিসিএ নামে দুটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানে।

নিউমার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, মার্কেটের প্রসাধন ব্যবসায়ী জাকির হোসেন এই দুই এমএলএম প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের প্রলুব্ধ করছেন। প্রতিদিনই তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে অনলাইনে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। গ্রাহকদের আস্থা পেতে তিনি তাঁর ব্যাংক হিসাবের কয়েকটি খালি চেকও ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

তবে এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায় জিপিটিসি নামে একটি অনলাইন এমএলএম প্রতিষ্ঠানে তিনি নিজে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। মাস দুয়েক আগে ৯০ হাজার টাকা লাভও পেয়েছিলেন। কিন্তু এমটিএফইর মতো চার দিন আগে জিপিটিসি অ্যাপও বন্ধ হয়ে গেছে।

জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘অনলাইন এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য আমি কয়েকজনকে বলেছিলাম সত্যি, কিন্তু কেউ কোনো উৎসাহ দেখাননি। আমি ব্যাংক চেক দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছি, এমন অভিযোগ কেউ পারলে প্রমাণ করুক।’

মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া শহরের নিউমার্কেটে কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, প্রসাধনী ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। জাকির কার্যত জিপিটিসি ও জিপিসিএ নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) থেকে অন্যদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করছেন।

নিউমার্কেটের একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় মাস দুয়েক ধরে জিপিটিসি এবং মালয়েশিয়াভিত্তিক অনলাইন এমএলএম প্রতিষ্ঠান জিপিসিএতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগে ঝুঁকেছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। জাকির হোসেনের কথায় মার্কেটের কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সপ্তাহখানেক আগেও একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী ১ হাজার ডলার থেকে ১০ হাজার ডলারের সমমূল্যের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এমটিএফই বন্ধ হওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজি হারানোর শঙ্কা বিরাজ করছে। আতঙ্কে অনেকেই বিনিয়োগ করা ডলার তুলে নিচ্ছেন।

মো. সাগর নামে নিউমার্কেটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, জিপিটিসি ও জিপিসিএ অ্যাপ দুটি চালু আছে। গতকাল মঙ্গলবারও দুজন বিনিয়োগকারী কিছু ডলার উত্তোলন করেছেন বলে তিনি জানান।

এর আগে এমটিএফই নামে অনলাইন এমএলএম প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পথে বসার উপক্রম হয়েছে শহরের অনেক ব্যবসায়ীর। প্রতিষ্ঠানটির সিইও রাম মোহন চন্দ্র বর্মণ গ্রাহকের অন্তত ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে এখন লাপাত্তা। ওই অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইনে ডলার কামিয়ে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্নে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে খুইয়েছেন শহরের শাপলা মার্কেটের ব্যবসায়ী মিলন হোসেন। তাঁর মতো অন্তত ১০ হাজার বিনিয়োগকারী ‘বড়লোক’ হওয়ার স্বপ্নে এমটিএফইয়ের প্রতারণার ফাঁদে এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, অনলাইনভিত্তিক এমএলএম কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখনো থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। নিউমার্কেট এলাকায় জিপিটিসি ও জিপিসিএর কার্যক্রমের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।