কলকাতার রাজভবন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি কলকাতা: রাজ্যের কোনো রাজ্যপালের সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ভালো থাকেনি। একাধিকবার তিনি রাজ্যপালদের নাম উল্লেখ করেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এবার সেই ধারাবাহিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এবার তাঁর ক্ষোভ ভারতের সব রাজ্যপালের ওপর। মমতা বললেন, ‘ভারতের সব রাজ্যের রাজ্যপালের দপ্তর ও আবাসস্থল রাজভবনকে জাদুঘর করে দেওয়া হোক।’
ভারতে রয়েছে ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। প্রতিটি রাজ্যে রয়েছেন একজন করে রাজ্যপাল বা গভর্নর আর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রয়েছেন একজন করে লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
রাজ্যপালরা থাকেন প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে তাঁদের নিজস্ব দপ্তর এবং আবাসস্থল রাজভবনে। গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, ‘কী প্রয়োজন রাজ্যের রাজভবন বা রাজ্যপালের?’
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে তেমন সদ্ভাব নেই মমতার। তাঁর অভিযোগ, পাশ কাটিয়ে এখন রাজ্যপাল এই রাজ্যে সমান্তরাল এক প্রশাসন চালাচ্ছেন। তিনি রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করছেন। প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করছেন। রাজ্যের কোথায়ও অশান্তি হলে ছুটে যাচ্ছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচণ্ড অশান্তির কারণে তিনি ছুটেও গেছেন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। আর এসবই মানতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
শুধু বর্তমান রাজ্যপাল কেন, এর আগে যিনি রাজ্যপাল ছিলেন, সেই জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের অন্যদের সঙ্গেও। ধনখড় এখন ভারতের উপরাষ্ট্রপতি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমান রাজ্যপালের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে বলেন, ‘রাজ্যপালকে দিয়ে কী প্রয়োজন সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর? রাজ্যপালকে তো আমাদের প্রয়োজন হয় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য। এবার না হয় শপথ গ্রহণ করাবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।’
মমতা এ কথাও বলেছেন, ব্রিটিশরা যখন ছিল, তখন রাজ্যপালের প্রয়োজন ছিল। এখন রাজ্যে রাজ্যে গণতান্ত্রিক সরকার কাজ চালায়। রাজ্যপাল যে শপথবাক্য পাঠ করান, দরকার হলে সে কাজ করবেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।
গতকাল মমতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে বলেছেন, ‘একজন রাজ্যপাল পাঠিয়েছেন, রাজ্য নেই অথচ তিনি পালের গোদা। তাঁর কাজই হচ্ছে উপাচার্য পরিবর্তন করে দেওয়া। আর বিজেপি এবং আরএসএসের লোককে উপাচার্য হিসেবে বসিয়ে দেওয়া। কী ভেবেছেন আপনারা?’
মমতার এই মন্তব্যের পর সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী জানেন না যে ব্রিটিশ আমলে রাজ্যপাল পদটা ছিল না। ইতিহাসের চর্চা থাকলে এমন ভুলভাল কথা বলতেন না। এখন বলছেন রাজ্যপাল পদের দরকার নেই। এটা তো ছিল আমাদের কথা।’
কলকাতার রাজ্যপালের আবাসস্থল ও দপ্তর ‘রাজভবন’ তৈরি হয়েছিল ১৮০৩ সালে। প্রথম এটি ছিল গভর্নমেন্ট হাউস। তারপর ভাইসরয় ভবন। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর হয়ে যায় রাজভবন। কলকাতার রাজভবন ৮৪ হাজার বর্গফুট আয়তনের। রয়েছে এই ভবনে ৭০টি কক্ষ।