সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী বক্তব্য দেন | ছবি: তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে

বাসস, ঢাকা: বিএনপির নেতারা জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কয়েকজন জঙ্গি আটকের পর মির্জা ফখরুল সাহেব বললেন, মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য নাকি এই জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, বিএনপি মহাসচিবসহ দলটির নেতারা জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান পৃষ্ঠপোষক।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা জঙ্গি দমন করেছি, আমরা জঙ্গি নির্মূল করতে পারতাম, যদি তাঁরা জঙ্গিগোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতা না করতেন।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরাম এ সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির যেমন চেয়ারম্যান, তেমন মহাসচিব। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার যখন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছিল, অনেক জঙ্গি আটক হচ্ছিল, তখন খালেদা জিয়া বলেছিলেন যে কিছু মানুষকে ধরে নিয়ে কিছুদিন আটক করে রাখার পর যখন চুল-দাড়ি লম্বা হয়, তখন তাদের জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হয়। সে কারণেই তাঁরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন ৫০০ জায়গায় বোমা ফেটেছিল; শায়খ আবদুর রহমান, বাংলা ভাইয়ের উৎপত্তি হয়েছিল এবং জঙ্গিদের দিয়ে হাওয়া ভবন তৈরি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ দেশ যখন অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, বিএনপি ও তাদের দোসররা তখন নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, যারা জঙ্গিগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক, জঙ্গিদের লালন-পালন করে, তাদের কোনো বিদেশি শক্তি সমর্থন করে না। আর দেশের জনগণ তো তাদের সঙ্গে নেই। সুতরাং তাদের সঙ্গে কেউ নেই।

১৫ আগস্ট নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের প্রধান কুশীলব ছিলেন দুজন। একজন হচ্ছেন খন্দকার মোশতাক, আরেকজন হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। জিয়া ও তাঁর পরিবারই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরপরই খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণ করে জিয়াউর রহমানকে প্রধান সেনাপতি নিয়োগ করেছিলেন। আর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সব খুনিকে দেশে এবং বিদেশে পুনর্বাসিত করেছিলেন, বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়েছিলেন। আবার ১৯৭৯ সালে সংসদ গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল উপস্থাপন করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে না হয়, সে জন্য সেটি পাস করা হয়। জিয়াউর রহমান কীভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এগুলোই তো তার প্রমাণ।

এ সময় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের বিচার হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা যদি আমরা না করি, তাহলে আজ থেকে শত বছর পর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারবে না কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনা করেছিল, কারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনে কুশীলব ছিল।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন  বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের তথ্য কেউ দিলে সরকার তাঁকে পুরস্কার দেবে। ২১ বছর ধরে যারা খুনি ও খুনিদের পেছনের লোকজনকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের মুখোশ খুলে দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত শক্তিশালী আইনের শাসনের দেশ। এসব দেশে খুনিদের আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সরকারকে অনেক চিঠি লিখেছে, যাতে খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠিও লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সাবেক মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাবেক সভাপতি কাজী রফিক, সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, বাংলাদেশ পোস্টের সম্পাদক শরীফ শাহাবুদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রতন, তরুণ তপন চক্রবর্তী, কার্তিক চ্যাটার্জি, শফিকুল করিম সাবু প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।