নওগাঁয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সাঈদীর জন্য দোয়া, ইমামসহ দুজন কারাগারে

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার নওগাঁ শহরের তাজের মোড়ে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠান | ছবি: সংগৃহীত 

প্রতিনিধি নওগাঁ: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে তাঁর জন্য দোয়া পাঠের ঘটনা ঘটেছে। উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা তৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন এবং সেখানে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মোনাজাত পরিচালনাকারী ইমামসহ দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

বুধবার দুপুরে দুজনকে পাঁচ-ছয় মাস আগের একটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে নওগাঁ সদর থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার দুজন হলেন নওগাঁ শহরের তাজের মোড় এলাকার বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন (৩০) ও নওগাঁ পৌরসভার পার-নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান (৫০)। তিনি পেশায় রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী।

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিহত শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁ শহরের তাজের মোড় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দোয়া মাহফিল ও গণভোজের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নওগাঁ সদর আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন জলিল।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে মোনাজাত পাঠ শুরু হয়। মোনাজাত পরিচালনা করছিলেন তাজের মোড় বায়তুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিম হোসেন। মোনাজাতের একপর্যায়ে তিনি সদ্য প্রয়াত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া পাঠ করেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতা-কর্মীরা নিষেধ করলেও তিনি দোয়া চালিয়ে যান। এরপর মোয়াজ্জেম হোসেনকে শহীদ মিনারের পাশে নিয়ে জেরা করেন নেতা–কর্মীরা। ইমাম তাঁদের জানান, তাজের মোড়ের রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান তাঁকে এই অনুষ্ঠানে সাঈদীর মৃত্যুতে দোয়া পাঠ করতে বলেছেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর জন্য দোয়া—এটা খুবই লজ্জার। ওই অনুষ্ঠানে আমি এমপির (সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন) পাশেই ছিলাম। হুজুর যখন মোনাজাতে সাঈদীর জন্য দোয়া করা শুরু করেন, তখন তৎক্ষণাৎ আমিসহ অন্যরা প্রতিবাদ করেন। পরে পুলিশ এসে ওই ইমাম ও আরেকজনকে ধরে নিয়ে যায়। এটার দায়ভার অনুষ্ঠান আয়োজকদেরও নিতে হবে।’

জানতে চাইলে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ (শিষান) বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম না। পৌর আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা ওই অনুষ্ঠান করেছেন, তা–ও জানি না। এখানে অপ্রীতিকর কিছু হলে তার দায়ভার তাঁদেরই নিতে হবে।’

আটক ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানকে নওগাঁ সদর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান মুঠোফোনে বলেন, মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অনুষ্ঠানে মোনাজাত বিষয় নয়, অন্য একটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

বিষয়টি নিয়ে আজ দুপুরে জানতে চাইলে ওসি জানান, ইমাম মোয়াজ্জেম ও হাফিজুর রহমানকে পাঁচ-ছয় মাস আগের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে নেওয়া হয় এবং পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পাঁচ-ছয় মাস আগে নওগাঁ সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছিল। ওই মামলায় তাঁদের দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।