বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন রেডিওথেরাপি নিতে আসা ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ফেরত যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি  বগুড়া: বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ কারণে দুই সপ্তাহ ধরে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবা দেওয়া বন্ধ রয়েছে। দূরদূরন্ত থেকে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল আলম বলেন, ক্যানসারের রোগীদের অস্ত্রোপচারের পর দেওয়া হয় কেমোথেরাপি, এরপর রেডিওথেরাপি। একজন রোগীকে কয়টি রেডিওথেরাপি এবং কত দিন দেওয়া হবে, তা নির্ভর করে রোগের অবস্থা অনুযায়ী।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রেডিওথেরাপি সেবার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে গড়ে প্রতি মাসে ৭০ জন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে আসেন। আগামী নভেম্বর মাস পর্যন্ত প্রায় ৩০০ রোগী রেডিওথেরাপির জন্য সিরিয়াল নিয়েছেন। লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্র বিকল হওয়ায় দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষমাণ রোগীর তালিকা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রেডিওথেরাপি সেবার জন্য এসেছিলেন জয়পুরহাটের ললিতা রানী। ললিতা বলেন, ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর তিন মাস আগে রেডিওথেরাপি সেবার জন্য সিরিয়াল দিয়েছিলেন। নির্ধারিত দিনে সেবা নিতে এসে জানতে পারেন, রেডিওথেরাপির মেশিন নষ্ট। আট দিন ধরে থেরাপির জন্য হাসপাতালে এসে ফিরে যাচ্ছেন। কবে মেশিন সচল হবে সেটা ঠিকমতো কেউ বলতে পারছে না।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামের বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান বলেন, তাঁর স্ত্রী ঢাকায় চিকিৎসক দেখিয়েছেন। চিকিৎসক রেডিওথেরাপির জন্য পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গত জুন মাসে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেডিও থেরাপির জন্য যান। কয়েক দিন ঘোরাঘুরির পর ১১ সেপ্টেম্বরের সিরিয়াল নেওয়া হয়। কিন্তু এর আগেই যন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছে। কবে মেরামত হবে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রায়ই হাসপাতালে ধরনা দিচ্ছেন। আবার ১১ সেপ্টেম্বরের সিরিয়াল পিছিয়ে কবে নতুন তারিখ পড়ে, তা-ও এখন অনিশ্চিত।

 চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবার জন্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্র বরাদ্দ দেওয়া হয়। যন্ত্রটি দীর্ঘদিন ধরেই প্যাকেটবন্দী ছিল। পরে হাসপাতালে রেডিওথেরাপি ও অনকোলোজি বিভাগ চালুর পর যন্ত্রটি চালু হয়। কিন্তু যন্ত্রটি ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। এর আগে ২০১৪  সালের নভেম্বর এবং ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে যন্ত্রটি বিকল হয়। পরে তা মেরামতের পর সচল হয়। ২০১৮ সালে যন্ত্রটি বিকল হয়ে পড়লে প্রায় ছয় মাস রেডিওথেরাপি সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

 হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে ২ হাজারের বেশি রোগী। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর ক্যানসার আক্রান্ত রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। রোগীর চাপ সামাল দিতে গিয়ে ঘন ঘন লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্র বিকল হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে যাঁরা বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন, তাঁদের ব্যয় করতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি টাকা।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের লিনিয়ার অ্যাকসেলারেটর যন্ত্র বিকল হওয়ায় ক্যানসার রোগীদের রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানোর পর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা এসে বিকল যন্ত্রাংশ শনাক্ত করেছেন। যন্ত্রাংশ কিনে মেরামত হতে সময় লাগবে। মেরামত না হওয়া পর্যন্ত রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ থাকবে।

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৮ সালে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রথম রেডিওথেরাপি মেশিন বসানো হয় টাঙ্গাইলের কুমুদিনী হাসপাতালে। এরপর ১৯৫৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু করা হয় রেডিওথেরাপি মেশিন। বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নয়টি হাসপাতালে ক্যানসারের রেডিওথেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। দেশে প্রাক্কলিত ক্যানসারের রোগী রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ। প্রতিবছর আড়াই-তিন লাখ নতুন রোগী যুক্ত হয়। মারা যায় বছরে প্রায় দেড় লাখ রোগী।

বগুড়া জেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি বজলুল করিম বাহার বলেন,  ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের শেষ ভরসা রেডিওথেরাপি। ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর জীবন বিপন্ন করা চলবে না।  রেডিও থেরাপির গুরুত্ব বুঝতে হবে।