কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আব্দুল কুদ্দুস ও রুহুল বয়ান, মহেশখালী থেকে: কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম।
 
বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ৬০০ একরের পরিত্যক্ত লবণ মাঠে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের বৃহৎ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির মাতারবাড়ী সাইট অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, আজ প্রকল্পের প্রথম ৬০০ মেগাওয়াট ইউনিটের পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। প্রথম দিকে জ্বালানি তেল দিয়ে উৎপাদনে যাওয়া হবে। চার-পাঁচ দিন পর কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

প্রথম দিন ১২৫ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা জানিয়ে প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, এ জন্য ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল প্রয়োজন হবে। ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে আরও অন্তত এক মাস সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রে কয়লা মজুত রাখা হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে কেন্দ্রটি। আর ৬০০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিটটির কাজও ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা হবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক ও প্রকৌশলী কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ২৭৫ মিটার উঁচু একটি চিমনি আছে। দুটি বয়লারের মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে, অন্যটির কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। বন্দর থেকে খালাস করা কয়লা সংরক্ষণের জন্য পৃথক চারটি স্টোরের নির্মাণকাজ চলছে। একেকটি স্টোরের ধারণক্ষমতা দুই লাখ টন। সাবস্টেশনের কাজ শেষ হওয়ায় গত ১৫ এপ্রিল থেকে ৪০০ কেভি সঞ্চালনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে এখন প্রকল্পের কাজ চালানো হচ্ছে।

কোল পাওয়ার সূত্র জানায়, জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুমিতমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএসআই এই প্রকল্পে নির্মাণকাজে ১ হাজার ১৫০ জন বিদেশি নাগরিকসহ ৮ হাজার মানুষ প্রতিদিন কাজ করছেন।

এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে পুরো কক্সবাজার আলোকিত হবে জানিয়ে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম মাতারবাড়ীর এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি পুরোদমে চালু হওয়ার পর দেশে বিদ্যুৎ খাতে বিরাট অবদান রাখবে। লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসবে। পাশাপাশি মহেশখালীসহ কক্সবাজারের পর্যটন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র বদলে যাবে।